খোরশেদ মিয়া আলম: দুই ব্যক্তিত্বের জীবনী
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘খোরশেদ মিয়া আলম’ নামটি দুটি ভিন্ন ব্যক্তিত্বকে নির্দেশ করে। প্রথমজন একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, আর দ্বিতীয়জন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো:
১. মোঃ খোরশেদ আলম (অর্থনীতিবিদ):
মোঃ খোরশেদ আলম (১৫ জানুয়ারি ১৯৩৫ - ২৮ জুলাই ২০২১) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পঞ্চম গভর্নর ছিলেন (১৯৯২-১৯৯৬)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও লোকপ্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের মাধ্যমে পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও পাবনার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তথ্য, স্থানীয় সরকার, যোগাযোগ, শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর হওয়ার পূর্বে তিনি মুখ্য অর্থসচিব ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম মুদ্রানীতি কমিটি গঠন ও পরিচালনা করেন এবং আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় অবদান রাখেন। তিনি একজন ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন নিউ ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
২. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম (বীর মুক্তিযোদ্ধা):
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম (১ জুলাই ১৯৫১ - ২৬ জুন ২০২১) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ সাহসিকতার জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। তার বীরত্বভূষণ নম্বর ২৯৫। কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে তার জন্ম। ১৯৭১ সালে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতে নৌ কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং অপারেশন জ্যাকপটে চট্টগ্রাম বন্দর আক্রমণে অংশ নেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে গমন করেন এবং ঠিকাদারী, পোল্ট্রী ও কৃষি ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ২০২১ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত তথ্যগুলি থেকে দুই খোরশেদ মিয়া আলমের জীবনী এবং কাজের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষণীয়। তাদের জন্ম তারিখ, পেশা, মৃত্যু তারিখ ও কৃতিত্ব পরস্পর ভিন্ন।