মুদ্রানীতি

মুদ্রানীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে মুদ্রানীতির ভূমিকা অপরিসীম। এটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত নীতি, যা অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। শতাব্দী ধরে মুদ্রানীতি ধাতব মুদ্রা ও কাগজী মুদ্রার ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল ছিল। ১৬৯৪ সালে ইংল্যান্ডের ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর কাগজী মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের প্রতিষ্ঠা মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। এরপর থেকে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ মুদ্রানীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়।

উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রানীতির লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে সকল দেশের মুদ্রানীতির লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। মুদ্রানীতির প্রধান হাতিয়ার হলো সুদের হার, মুদ্রা সরবরাহ, রিজার্ভ রেট এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ২০২১ ও ২০২২ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। করোনা মহামারীর সময় মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

মুদ্রানীতির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অর্জনে এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার হলেও, এর ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ ভুল মুদ্রানীতি অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে।
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতির লক্ষ্য।
  • সুদের হার, মুদ্রা সরবরাহ, রিজার্ভ রেট মুদ্রানীতির প্রধান হাতিয়ার।
  • করোনা মহামারীর সময় মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রণোদনা দেওয়া হয়।
  • মুদ্রানীতির সঠিক ব্যবহার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।