ক্ষমতার ভারসাম্য: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিশ্লেষণ
ক্ষমতার ভারসাম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারণা যা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার উপযুক্ত বন্টন ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। এটি স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন গ্রীসের এরিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের মন্টেস্কিউ পর্যন্ত অনেক দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ ও ভারসাম্যের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যেখানে আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করা হয়েছে। তবে একেবারে পৃথক নয়, বরং পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। এখানে প্রধানমন্ত্রীই সরকার প্রধান এবং সংসদের নেতা। ফলে আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকে। বিচার বিভাগ আলাদা, কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক করা হলেও, নির্বাহী বিভাগের প্রভাব কিছুটা এখনও বিদ্যমান।
ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন এবং এক ব্যক্তির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটি দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতার পথ প্রশস্ত করে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হুমকির মুখে ফেলে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।
সংবিধান সংশোধন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতার কারণে ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই তাঁকে কাজ করতে হয়। বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ও প্রভাব কম থাকায় সংসদেও পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সুতরাং, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংশোধন এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক রাষ্ট্র সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার: ক্ষমতার ভারসাম্য গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে এটি প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান, আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের অভাব বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা সম্ভব।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।
স্বাধীন বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।