বাংলাদেশে কৃষকদের ক্ষতি: বন্যা, বৃষ্টি ও দুর্যোগের প্রভাব
২০২৪ সাল বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য এক অসহায় বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ বছর বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, শৈত্যপ্রবাহ ও তাপপ্রবাহের মতো একাধিক দুর্যোগ কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
- *লক্ষ্মীপুরের অবস্থা:** লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ পাঁচ উপজেলায় ১৫ দিনের টানা বর্ষণ ও বন্যায় ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এক লাখ ৫৭ হাজার ২০৯ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। জেলা কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
- *কুড়িগ্রামের ক্ষতি:** কুড়িগ্রামে শেষ মুহূর্তের বন্যায় ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষকের প্রায় ৩১ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। রোপা আমন, শাকসবজি ও বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
- *দিনাজপুরের ক্ষতি:** ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে দিনাজপুরের ৫২ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে সাড়ে তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
- *দেশব্যাপী ক্ষতি:** অগাস্টের বন্যায় দেশের ২৩ জেলায় ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ লাখেরও বেশি কৃষক দুর্দশায় পড়েছেন। মোট কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। আউশ ধান, রোপা আমন, বোনা আমন, আমনের বীজতলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
- *লালমনিরহাট:** তিস্তাপাড়সহ লালমনিরহাট জেলায় বন্যায় প্রায় আট হাজার সাতশ জন কৃষক প্রায় চার কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আমন ধানসহ নানান জাতের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
- *সরকারি উদ্যোগ:** কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থসহ বিভিন্ন পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ক্ষতির তুলনায় সরকারি সহায়তা অপ্রতুল।
- *মূল্যস্ফীতি:** দুর্যোগের ফলে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, যার ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে উঠেছে।
এই ঘটনাগুলো কৃষকদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও কৃষি খাতের উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।