শহীদ আবু সাঈদ: ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক প্রতীক
আবু সাঈদ (২০০১-১৬ জুলাই ২০২৪), একজন তরুণ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী, যিনি আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যু কোটা আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলে এবং তাকে আন্দোলনের একজন প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়।
- *ব্যক্তিগত জীবন:**
আবু সাঈদ রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে মকবুল হোসেন ও মনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। তিনি জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন, খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি-তে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
- *কোটা সংস্কার আন্দোলন:**
২০২৪ সালের ৬ জুন শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ শামসুজ্জোহার উদাহরণ টেনে ফেসবুকে একটি অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট করেন।
- *মৃত্যু:**
১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি হাতে লাঠি নিয়ে দু'হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং পুলিশের গুলিতে আহত হন। তিনি হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
- *পরিণতি:**
আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তাজহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তথ্য অনুযায়ী বিক্ষোভকারীদের ওপর দোষ চাপানো হয়, যদিও পরবর্তী প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রমাণ করে যে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুতে রংপুর পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল পুলিশের সহিংসতার নিন্দা করেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও গণমাধ্যম তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। রংপুর পার্ক মোড়ের নামকরণ করা হয় 'আবু সাঈদ চত্বর' এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ করা হয় 'শহীদ আবু সাঈদ গেইট'। কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী তার নামে 'প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ' নামক একটি কবিতা রচনা করেন।
আবু সাঈদের স্মৃতি বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে। তার আত্মত্যাগ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জোগায়।