কোটা সংস্কার আন্দোলন: একটি বিশ্লেষণ
২০১৮ সালের শুরুতে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, যা ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ নামে পরিচিত। ১৯৭২ সালে প্রবর্তিত এই কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধা, জেলাভিত্তিক, নারী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কোটা সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫ শতাংশেরও বেশি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যার ফলে মেধাবী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছিল।
- *আন্দোলনের সূচনা ও উত্থান:**
আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ‘কোটা সংস্কার চাই (সকল চাকরির জন্য)’ নামক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শাহবাগে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। তারেক রহমান, রাশেদ খান, সাকিব চৌধুরীসহ অনেক শিক্ষার্থী নেতারা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- *আন্দোলনের দাবি ও ঘটনা:**
আন্দোলনকারীরা মূলত পাঁচটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিল: সকল সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল, কোটা পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, প্রশাসনের নির্যাতন বন্ধ এবং আন্দোলনকারীদের উপর হামলা বন্ধ। আন্দোলন অব্যাহত থাকার সাথে সাথে, শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের নির্যাতন, ছাত্রলীগের হামলা, আন্দোলন নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, তবুও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মুখোমুখি হতে হয়।
- *সরকারের পদক্ষেপ ও পরবর্তী ঘটনা:**
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে, ১১ এপ্রিল ২০১৮, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে সকল কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে, পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ৫ জুন বাতিলকৃত কোটা পুনরায় বহাল করে। এই রায়ের পর আন্দোলন পুনরায় সক্রিয় হয়।
- *আন্দোলনের প্রভাব:**
কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি ছাত্র সমাজের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের দিকে নতুন পথ উন্মোচন করে এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের প্রতি জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
- *সংক্ষেপে:**
কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অধিকার আন্দোলন। এটি শিক্ষার্থীদের ঐক্য, সাহস ও সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যদিও আন্দোলনের দাবি পুরোপুরি পূরণ হয়নি, তবুও এটি বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে।