বাংলাদেশে গায়েবি মামলার ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গায়েবি মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব মামলায় অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, কিংবা ঘটনাটিই ঘটেনি বলে প্রমাণিত। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গায়েবি মামলা দায়েরের ঘটনা বেশি হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় ৫১টি জেলা থেকে গায়েবি মামলার আনুমানিক হিসাব পেয়েছে এবং ১৩টি জেলার তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে।
২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ডয়চে ভেলের ২০১৯ সালের ১ এপ্রিলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ৩৭৩৬টি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যাতে ৩১৩১৩০ জনকে আসামি করা হয়। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করে উল্লেখ করেন যে, এ ধরণের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
আইনজীবী আহসানুল করিমের মতে, গায়েবি মামলা মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-নিপীড়নের জন্য করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০০৮ সালের পর থেকে গায়েবি মামলার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারও গায়েবি মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি মনে করেন যে এসব মামলার ফলে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে দায়ের করা রাজনৈতিক গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় জেলা ও মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটরদের কাছে এসব মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেন যে, আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, গায়েবি মামলার সংখ্যা নির্ধারণের উদ্যোগের কথা জানানো হয়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও গায়েবি মামলা হত বলে উল্লেখ করা হয়। গায়েবি মামলা দেশের আইনি ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
গায়েবি মামলার প্রভাব: গায়েবি মামলা ব্যক্তিদের জীবনে ব্যাপক ক্ষতি করে। অর্থনৈতিক ক্ষতি, সামাজিক বৈষম্য এবং মানসিক অশান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি গায়েবি মামলা বিচার ব্যবস্থার ওপর ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। এইসব সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।