সাহাবুদ্দীন আহমদ

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:৪৮ এএম

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ - ১৯ মার্চ ২০২২) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। একজন প্রখ্যাত আইনবিদ হিসেবে তিনি বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দুইবার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণকারী সাহাবুদ্দীন আহমদ নান্দাইলে বেড়ে ওঠেন। তিনি ১৯৪৫ সালে চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদান করেন এবং লাহোর সিভিল সার্ভিস একাডেমী এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন:

সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর সাহাবুদ্দীন আহমদ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন এবং ঢাকা, বরিশাল, কুমিল্লা, ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার, ১৯৭২ সালে হাইকোর্টের বিচারক এবং ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব:

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ.এম. এরশাদের পদত্যাগের পর, সাহাবুদ্দীন আহমদ ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ই অক্টোবর ১৯৯১ পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।

অবদান:

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষায় এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য। তাঁর বিচারিক রায় এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের সময় তিনি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতার পরিচয় দেন।

মৃত্যু:

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ২০২২ সালের ১৯ মার্চ ৯২ বছর বয়সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

সারসংক্ষেপ:

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন ন্যায়নিষ্ঠ আইনবিদ, দক্ষ প্রশাসক ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্রনেতা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি।
  • তিনি দুইবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
  • ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • তিনি ১৯৯১ সালের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করেন।
  • তার বিচারিক রায় ও রাষ্ট্রনেতার ভূমিকায় তিনি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা প্রদর্শন করেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।