লাহোর: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোর, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম শহর হিসেবে এর আনুমানিক জিডিপি (পিপিপি) ২০১৯ সালে ছিল ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘আধুনিক লাহোরের জনক’ হিসেবে স্যার গঙ্গা রামকে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু শাহী, গজনবী, ঘুরি, দিল্লি সালতানাত, মুঘল সাম্রাজ্য, শিখ সাম্রাজ্য এবং অবশেষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য—এই সকল শক্তির অধীনে লাহোরের ইতিহাস রয়েছে। ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের আক্রমণের পর একটা সময় এটি ক্ষয়ের সম্মুখীন হয়। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে শিখ সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে কিছু হারানো মহিমা ফিরে পায়। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল লাহোর। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী হয়।
লাহোরের সাংস্কৃতিক প্রভাব পাকিস্তান জুড়ে বিস্তৃত। ইউনেস্কো সাহিত্যের শহর হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পাকিস্তানের প্রকাশনা শিল্পের প্রধান কেন্দ্র এবং সাহিত্যের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার ক্ষেত্রেও লাহোর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে অবস্থিত। একসময় ললিউডের কেন্দ্র হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করাচিতে বেশি হচ্ছে। কাওয়ালি সঙ্গীতের জন্য লাহোর অত্যন্ত বিখ্যাত।
পর্যটনের দিক থেকেও লাহোর পাকিস্তানের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ওয়ার্ল্ড সিটি, বাদশাহী মসজিদ, ওয়াজির খান মসজিদ, শিখ ও সুফি মাজার, লাহোর ফোর্ট এবং শালিমার উদ্যান (ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান) এর প্রধান আকর্ষণ। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়াকে সংযুক্ত কারী এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত এই শহরটি বহু রাজ্য ও রাজবংশের রাজধানী হিসেবে কাজ করেছে। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে চীনা পুরোহিত চুয়ান জাং এর বিবরণ দিয়ে গেছেন। ১১শ শতকে মুসলিম গজনভিরা এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৫২৪ সালে এটিকে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ১৭৬৭ সালে এটি একটি শিখ রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয় এবং ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হয়।
লাহোরের ভৌগোলিক অবস্থান ৩১°১৫′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৩১°৪৫′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৪°০১′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৭৪°৩৯′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। রাভি নদী উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শহরের আয়তন ৪০৪ বর্গকিলোমিটার। ২০১৭ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ১১,১২৬,২৮৫। ৯৭% মুসলমান, ২% খ্রিস্টান এবং ১% শিখ ও হিন্দু। এখানে একটি ছোট জরাস্ট্রুবাদী সম্প্রদায়ও আছে। লাহোর শিল্প-অধ্যুষিত অঞ্চলের একটি বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। টেক্সটাইল, ধাতব দ্রব্য, রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি শিল্প এখানে আছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। স্থাপত্যের দিক থেকেও এর মুঘল আমলের অনেক উল্লেখযোগ্য ভবন আছে যেমন জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ ও সমাধি, লাহোর দুর্গ, ওয়াজির খান মসজিদ, শালিমার বাগান, লাহোর জাদুঘর ইত্যাদি।