ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম উপজেলা নান্দাইল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়। ৩২৬.৩৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৪°২৮´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩০´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। নান্দাইলের উত্তরে ঈশ্বরগঞ্জ, দক্ষিণে হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ সদর, পূর্বে কেন্দুয়া ও তাড়াইল এবং পশ্চিমে ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলা অবস্থিত। প্রায় ৪০২,৭২৭ জনের বসবাসকারী এই উপজেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশ উল্লেখযোগ্য। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কাঁচামাটিয়া, নরসুন্দা ও মঘা নদীসহ বিভিন্ন বিল ও জলাশয় নান্দাইলের প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করেছে।
১৯১২ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নান্দাইল ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়। ঐতিহাসিক দিক থেকে নান্দাইল বেশ সমৃদ্ধ। ১৪৯৩-১৫১৯ সালে নির্মিত মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ, জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের তাপস জাহাঙ্গীর শাহের মাযার ও খানকা উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। আঠারো শতকে নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজারে নীলকরদের কুঠি স্থাপনের পর থেকেই ‘নীল আন্দোলন’ শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নান্দাইল বীরত্বের ইতিহাস সৃষ্টি করে। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী রাজগাতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় বর্বরতার নজির স্থাপন করে। ১৭ নভেম্বর পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা ও শামসুল হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, যা ‘নান্দাইল শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। ১১ ডিসেম্বর নান্দাইল স্বাধীন হয়, যা ‘মুক্ত দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শুভখিলা কালীগঞ্জ রেলওয়ে ব্রীজ এলাকা ও বারুই গ্রামে গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সাক্ষী।
শিক্ষার দিক থেকে নান্দাইলের অগ্রগতি লক্ষণীয়। ৫টি কলেজ, ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮৯টি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ’, ‘চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ ও ‘শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা’ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নান্দাইলের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আলু, ডাল প্রভৃতি ফসলের চাষাবাদ এই উপজেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এছাড়াও অর্থনীতিতে অবদান রাখে। বিভিন্ন হাট-বাজার ও মেলা নান্দাইলের ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায়। নান্দাইল বাজার, চামটা বাজার, জালুয়া বাজার, কালেঙ্গা নয়া বাজার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য বাজার।
স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাক ও আশা সহ বিভিন্ন এনজিও এখানে স্বাস্থ্য সেবা ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে। নান্দাইলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে স্থাপন করেছে।