শ্রমিক হত্যা

আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:১১ এএম

বাংলাদেশে শ্রমিক হত্যা: একটি বেদনাদায়ক বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্টস শিল্পের অবদান অপরিসীম। কিন্তু এই শিল্পের সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে শ্রমিকদের এক অমানবিক জীবনযাত্রা, নির্যাতন, এবং হত্যার ন্যক্কারজনক ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লড়াইয়ে তাদের প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু গার্মেন্টস শিল্পেই নয়, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।

তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড (২০১২): ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস নামের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১১ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘটনায় দোষীদের বিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘোর অবহেলা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার অভিযোগ মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে উঠেছে।

২০২৩ সালের শ্রমিক আন্দোলন: ২০২৩ সালে ২৫,০০০ টাকা ন্যুনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র দমন দেখা যায়। চারজন শ্রমিককে হত্যা করা হয় এবং হাজার হাজার শ্রমিককে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ও শতাধিক শ্রমিক হতাহতের শিকার হন।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের নানা দাবি: বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া, বকেয়া ও মজুরির দাবি আদায়, ক্ষতিপূরণ, এবং নিরাপদ কাজের পরিবেশ প্রভৃতি দাবির জন্য শ্রমিকরা বারবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে চলেছে। এই আন্দোলনেও শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

আশুলিয়ায় শ্রমিক হত্যা (২০২৪): ২০২৪ সালে আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক কাউসার খান নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন। এই ঘটনার পর গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি প্রতিবাদ জানায় এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানায়।

প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডে হত্যা (২০২৪): ২০২৪ সালের জুন মাসে গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় কারখানার মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠে।

গণতদন্ত কমিটির প্রতিবেদন: ২০২৩ সালের শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা তদন্তে গণতদন্ত কমিটি দায়ীদের শাস্তি এবং শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছে।

বিচারহীনতা: অধিকাংশ ঘটনায় দোষীদের বিচার না হওয়ায় শ্রমিকরা আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই বিচারহীনতা শ্রমিক হত্যার ঘটনা বারবার ঘটার জন্য উৎসাহিত করে।

এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবনযাত্রা এবং অধিকারের বেদনাদায়ক বাস্তবতা তুলে ধরে। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কারখানা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র দোষীদের শাস্তি দিয়ে নয়, বরং আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডে ১১১ শ্রমিক নিহত
  • ২০২৩ সালের শ্রমিক আন্দোলনে চারজন শ্রমিক হত্যা
  • আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক নিহত
  • গাজীপুরে শ্রমিকনেতা হত্যা
  • গণতদন্ত কমিটি দায়ীদের বিচারের সুপারিশ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - শ্রমিক হত্যা

26 ডিসেম্বর, 2024

এই ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি চলছে।