মোস্তফা নামটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে একাধিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আসে। এই নামের সাথে যুক্ত কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবনী ও অবদান নিয়ে আলোচনা করা হলো।
হালী মোস্তফা (১৯৪৭-২০০০): একজন বিশিষ্ট স্থপতি ও লেখক। তার প্রাতিষ্ঠানিক নাম মোস্তফা হারুন কুদ্দুস। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার নাসিরকোটে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল, কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষা গ্রহণের পর, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। নেদারল্যান্ডস থেকে নগর ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। ইরাকে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান সংরক্ষণ ও সংস্কার প্রকল্পেও অংশগ্রহণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে তৃতীয় কলা ভবন (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, কৃষি ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর নিবাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিবাস এবং আরও অনেক। জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণে খ্যাতিমান স্থপতি লুই আই কানের সহযোগী ছিলেন। উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা রচনা করেছেন। ২০০০ সালের ২৬ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪): একজন বিখ্যাত কবি ও লেখক। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্ম। লোককবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই কবি ১৯১৮ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি এ এবং ১৯২২ সালে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি পাস করেন। পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উর্দুর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা সংস্কার কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘রক্তরাগ’, ‘খোশরোজ’, ‘কাব্য-কাহিনী’, ‘সাহারা’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ‘বিশ্বনবী’ গ্রন্থটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘কাব্য সুধাকর’ ও ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধিতে ভূষিত হন।
এ.এন.এম গোলাম মোস্তফা (১৯৪২-১৯৭১): একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক। নীলফামারির পঙ্গাগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদ, মোহাম্মদী ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬-১৯৮৯): একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার ও গবেষক। পাবনার উল্লাপাড়ার গোবিন্দা গ্রামে জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘আপন যৌবন বৈরী’, ‘যেহেতু জন্মান্ধ’ ইত্যাদি তার কাব্যগ্রন্থ। অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হন।
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (১৯৪৭-১৯৭১): একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভোলার দৌলতখান উপজেলায় জন্ম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যুদ্ধ করে শহীদ হন। তার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।