মিথ্যা অপপ্রচার: একটি ব্যাপক সমস্যা
বাংলাদেশে মিথ্যা অপপ্রচার একটি ব্যাপক সমস্যা যা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। রাজনীতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং গণমাধ্যম - সর্বত্রই এর প্রভাব দেখা যায়। এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন ঘটনা, ব্যক্তি এবং সংগঠনের মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরব।
২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর থেকেই 'হেসেই খুন' শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের অসৎ তদন্তে একটি নিরীহ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়। এটি মিথ্যা অপপ্রচারের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এরপরের বছরগুলিতে ফেসবুক এবং অন্যান্য ব্লগে বহু বরেণ্য ব্যক্তি, যেমন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড. কামাল হোসেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, এবিএম মূসা, এবং ড. আকবর আলি খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়।
২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশের পর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। একটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহতের কথা জানালেও, সরকারের দাবি ছিল মাত্র ৮ জন নিহত হয়েছে। পরে সরকার দাবি করে যে কেউ মারা যায়নি। এই তথ্য বিতর্কের জন্ম দেয়, এবং অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনাটি মিথ্যা অপপ্রচারের রাজনৈতিক অভিসন্ধি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ।
রাজনীতিতে মিথ্যাচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শেখ হাসিনা নাস্তিক, খালেদা জিয়ার জন্ম চা-বাগানে, ৫ মে হেফাজতের কর্মীরা গায়ে রং মেখে শুয়ে ছিল, এই ধরণের বহু মিথ্যাচার রাজনীতিকদের দ্বারা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব মিথ্যাচারের স্বীকৃতির পরিবর্তে, এগুলো বিশ্বাস করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও মিথ্যাচার করে। তুলসী গ্যাবার্ডের পুরানো একটি প্রস্তাবকে নতুন করে উপস্থাপন করে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। এছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জড়িত মিথ্যা খবরও প্রচার করা হয়। এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা।
এই মিথ্যাচারের প্রতিকারের জন্য দলকানা মনোভাব পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন। মিথ্যাচার সবচেয়ে ভয়ংকর হয় যখন সরকারের সমর্থনে তা ছড়িয়ে পড়ে। মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের সকলেরই সচেতন হতে হবে।