ভারতের গণমাধ্যমের বিশাল ও গভীর প্রসার রয়েছে, কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে এর স্বাধীনতা কমে আসছে। ২০২১ সালে ১৭৯ টি দেশের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে ভারত ১৪০ তম স্থানে ছিল। ভারতে টেলিভিশনের আগমন অনেক আগেই হলেও, বহু বছর ধরে তা কেবলমাত্র দিল্লিতে সীমাবদ্ধ ছিল। টেলিভিশনকে বিলাসিতা হিসেবে দেখা হত এবং উন্নয়নশীল দেশে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লীর বাইরে টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ রাখে। পূর্ব ভারতে প্রথম টেলিভিশন কেন্দ্র কলকাতার টালিগঞ্জের রাধা ফিল্ম স্টুডিওতে স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে প্রায় ১,০০,০০০ টিরও বেশি সংবাদপত্র নিবন্ধিত ছিল এবং প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কপি বিতরণের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদপত্র বাজারের অধিকারী হয়েছিল। হিন্দি ভাষার সংবাদপত্র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তবে দেশের ২২ টি নির্ধারিত ভাষা এবং অন্যান্য অনেক ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্রের বিক্রয় এবং সাবস্ক্রিপশন কেবলমাত্র খরচের একটি ছোট অংশই পূরণ করে, বাকি অংশের জন্য বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন ও গণহত্যা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রচার করে এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করছে। তারা শেখ হাসিনার সরকার পতনকে পাকিস্তান, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখাচ্ছে এবং সাধারণ জনগণের ভূমিকাকে উপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, কিছু গণমাধ্যম হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করছে, ভুয়া খবর প্রচার করছে, এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে পক্ষপাতদুষ্টভাবে উপস্থাপন করছে। এই ঘটনাগুলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারিত অনেক তথ্য ভুল বলে প্রমাণ করেছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভারতীয় গণমাধ্যমের কিছু অংশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি গভীর ঘৃণা এবং ইসলামোফোবিয়া লক্ষ্য করা যায়। তবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আকাক্সক্ষার উপর আলোকপাত করা প্রয়োজন, আর ভারতকে এটা বোঝার প্রয়োজন যে বাংলাদেশ নিজেই তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন।