বিদ্যুতের খুঁটি: জীবনরেখা ও জটিলতা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের খুঁটি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য এক অপরিহার্য অবকাঠামো। ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভি, সিসি ক্যামেরা, টেলিফোন লাইন সহ আরো অনেক তারই আশ্রয়স্থল এই খুঁটি। কিন্তু একই সাথে এগুলোতে ঝুলে থাকা তারের জট, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনার অভাব সমস্যার সৃষ্টি করছে।
বরিশালের উদাহরণ: বরিশাল নগরীতে অর্ধশতাধিক ইন্টারনেট কোম্পানির তার বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলে আছে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের সমস্যা হলে খুঁটিতে ওঠানামা করা বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি অনেক সময় প্রভাবশালীদের ক্যাডার বাহিনী করে থাকে। এই জটিল পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন অফিসের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে নিরব ছিলেন।
আর্থিক দিক: ইন্টারনেট লাইন সংযোজনকারী কর্মীদের জন্য এটি জীবিকার একমাত্র উৎস। তাদের বেতন অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। বরিশালে ৩২ টি কোম্পানির অধীনে ৫০০ এর বেশি লোক কাজ করে। গ্রাহকরা মাসিক ৫০০-৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পরিষেবা পান। সরকারকে ভ্যাটও প্রদান করতে হয়।
সমাধানের প্রস্তাব: বিদ্যুতের খুঁটির উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য পৃথক খুঁটি বা মাটির নিচ দিয়ে তার টানার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন। প্রতিটি কোম্পানিকে নির্দিষ্ট রঙের তার ব্যবহার করতে হবে, যাতে তার জট কমে এবং সমস্যা সমাধান সহজ হয়।
অন্যান্য স্থানের সমস্যা: রংপুরে শত শত বাড়ি বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়, যা প্রাণঘাতী ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে নতুন সড়ক নির্মাণের সময় বিদ্যুতের খুঁটি সরানো না হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ বিদ্যুতের খুঁটির জন্য আটকে আছে। কুমিল্লার দেবিদ্বারে সড়ক সংস্কারের সময় বৈদ্যুতিক পিলার সরিয়ে না নেওয়ায় যান চলাচল কষ্টসাধ্য হয়েছে। রাঙামাটিতে গাছের ওপর লাইন টানার ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।
সারসংক্ষেপ: বিদ্যুতের খুঁটি জীবনধারণের অপরিহার্য অংশ হলেও তারের জট, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং ব্যবস্থাপনার অভাব গুরুতর সমস্যা তৈরি করছে। পৃথক অবকাঠামো তৈরি এবং সমন্বিত পরিকল্পনা এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন।