বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি): বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অগ্রদূত

১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে এটি দেশের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকায় অবস্থিত এর সদর দপ্তর থেকে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে পিডিবি। এর প্রধান নির্বাহী হলেন সরকার নিযুক্ত চেয়ারম্যান। ২০০১ সালে পিডিবির ২৮,৬৩৯ জন কর্মী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে নিয়োজিত ছিলেন।

প্রাথমিক ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা:

বাংলাদেশে আধুনিক বিদ্যুতায়নের ইতিহাস অনেক পুরোনো নয়। গাজীপুরের ভাওয়ালের রাজা ঊনবিংশ শতাব্দীতেই একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। ঢাকা শহরে ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয় অক্টোভিয়া স্টিল কোম্পানির উদ্যোগে, যার অর্থায়ন করেছিলেন ঢাকার নবাব খাজা আহসানুল্লাহ। তবে তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল খুব সীমিত। ১৯৩৩ সালে ডেভকো নামে আরেকটি বেসরকারি কোম্পানি ঢাকার পরীবাগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে। ভারত বিভাগের পর ১৯৫৭ সালে সরকার সকল বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও লাইন অধিগ্রহণ করে।

বর্তমানে পিডিবি ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য শহরে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। ঢাকায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডেসকো) এবং পল্লী অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব পালন করে। এরা মোট ভোক্তাদের ৬০% এর চাহিদা পূরণ করে, বাকি ৪০% পিডিবি। দেশে ২০৯.৯৩২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের মধ্যে পিডিবির লাইন ২৯.১৭৬ কিলোমিটার।

উৎপাদন ও বিতরণ:

পিডিবির আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উৎপাদন করে। ২০০৯ সালে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট, যা বিশ্বের সর্বনিম্নের মধ্যে। তবে সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছে, ফলে উৎপাদন বেড়েছে। ২০১১ সালের জুনে মোট উৎপাদন ছিল ৪,৬০০ মেগাওয়াট (পিডিবির ২৬০০ মেগাওয়াট, বেসরকারি ২০০০ মেগাওয়াট)। ২০১২ সালের মার্চে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ৮০০৫ মেগাওয়াট হয়, এবং ২২ মার্চ রেকর্ড ৬০৬৬ মেগাওয়াট উৎপন্ন হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট উৎপাদন ছিল ২৫,৬২২ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার, যার ৮৮.৪৪% এসেছে গ্যাসনির্ভর কেন্দ্র থেকে।

গ্রাহক ও আয়:

২০১১ সালে পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২,১৫৯,৮৭৯ (গৃহস্থালী ৪২.৭%, বাণিজ্যিক ৮.১৭%, শিল্প ৪১.০২%, কৃষি ৫.৬১%, অন্যান্য ২.৫%)। ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ১৫৭.১১৭ মিলিয়ন টাকা।

পিডিবির ভবিষ্যৎ:

বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য পিডিবি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং বিভিন্ন লিমিটেড কোম্পানি গঠন করেছে যেমন বাংলাদেশ পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, বাংলাদেশ রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি, বাংলাদেশ পাওয়ার সার্ভিসেস কোম্পানি এবং বাংলাদেশ পিসি পোল কোম্পানি। প্রাকৃতিক গ্যাস ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পিডিবি কাজ করে যাচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত।
  • পিডিবি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান।
  • ২০১২ সালে পিডিবি রেকর্ড ৬০৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • পিডিবি দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।