বাংলাদেশে পাখি শিকার একটি ব্যাপক সমস্যা, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। অনেক শিকারি অবৈধভাবে পাখি শিকার করে, তাদের মাংস বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে বা শখের বশবর্তী হয়ে। এই শিকারের ফলে দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দ্রুত কমছে।
পাখি শিকারের বিভিন্ন রূপ:
- চোরা শিকার: অনেকেই অবৈধভাবে বন্দুক, জাল, ফাঁদ এবং বিষ ব্যবহার করে পাখি শিকার করে। বিশেষ করে শীতকালে, যখন পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে, তখন শিকারের তীব্রতা বেড়ে যায়। টাঙ্গুয়ার হাওর, চলনবিল, তিস্তা নদীর মতো জলাভূমি এলাকায় এই চোরা শিকার বেশি ঘটে।
- বাজারজাতকরণ: শিকার করা পাখি প্রকাশ্যে ও গোপনে বাজারে বিক্রি হয়। বেড়া, সাঁথিয়া, রংপুর, সুনামগঞ্জ ইত্যাদি স্থানের বাজারে এ ধরনের অবৈধ বিক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।
- খাদ্য ও ঔষধি গুণের ভুল ধারণা: কিছু মানুষ বিভিন্ন পাখির মাংসে ঔষধি গুণ থাকার ভুল ধারণায় শিকারে লিপ্ত হয়। এই ধারণা ভুল এবং বিজ্ঞানসম্মত নয়।
- ফসল রক্ষা (ভুল ধারণা): কৃষকরা কখনও কখনও তাদের ফসল রক্ষার জন্য পাখি মারে, যদিও এটি আইনবিরোধী এবং ক্ষতিকারক। প্রকৃতপক্ষে, বেশিরভাগ পাখি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষায় সহায়ক।
প্রভাব:
পাখি শিকারের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাঘাত, কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি, এবং কিছু প্রজাতির পাখির বিলুপ্তির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
প্রতিকার:
- কঠোর আইন প্রয়োগ: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ কার্যকর করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শিকারিদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা জরুরী।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যমের মাধ্যমে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এবং স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
- সহযোগিতা: সরকার, প্রশাসন, বন বিভাগ, এনজিও, এবং জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন পাখি শিকার রোধে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠন:
- আকাশকলি দাস (পাবনার পাখিবন্ধু)
- আবুল কালাম আজাদ (বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের অধ্যাপক)
- রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তর
- মৎস্য অধিদপ্তরের ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট (ডব্লিউবিআরপি)
- স্থানীয় বাসিন্দারা, কৃষকরা এবং পাখিশিকারিরা।
স্থান:
- পাবনা (বেড়া, কৈটোলা)
- সাঁথিয়া
- টাঙ্গুয়ার হাওর
- চলনবিল
- তিস্তা নদী
- হাকালুকি হাওর
- রংপুর
- সুনামগঞ্জ
- বগুড়া
- ডুগডুগি বাজার
- ঠাকুরগাঁও