সাঁথিয়া: পাবনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলায় অবস্থিত সাঁথিয়া উপজেলা অঞ্চলটির সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ৩৩১.৫৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি উত্তরে ফরিদপুর (পাবনা) ও শাহজাদপুর উপজেলা, দক্ষিণে সুজানগর উপজেলা, পূর্বে বেড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে আটঘরিয়া ও পাবনা সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সাঁথিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৩৮০,৩০১ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৯১,২২৫ এবং মহিলা ১৮৯,০৭৬ জন। মুসলমান ৩৭০,১৮১, হিন্দু ৯,৯৬৭, খ্রিস্টান ১৩৬ এবং অন্যান্য ১৭ জন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য:
১৯০৫ সালে সাঁথিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৬ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলার নামকরণ নিয়ে দুটি জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রাচীনকালে এটি চরাঞ্চল ছিল এবং সিনথিয়া নামে এক সাঁওতাল আদিবাসীর নামানুসারে এর নামকরণ হয়। অন্য জনশ্রুতি অনুযায়ী, ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলে একা চলাচলের ঝুঁকি থাকায় মানুষ সাথী সহকারে চলাচল করত, যা থেকে 'সাঁথিয়া' নামের উৎপত্তি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাঁথিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাগডেমরা ইউনিয়নের ধূলাউড়ি ফকির পাড়ায় পাকসেনার নারী নির্যাতন ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ঘটনা ঘটে। ডাববাগান যুদ্ধ এবং সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হানাদার ক্যাম্প অপারেশন উল্লেখযোগ্য। নাগডেমরায় গণকবর এবং শহীদনগর ও সাঁথিয়া উপজেলা চত্বরে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলাশয়:
ইছামতি, বড়াল, এবং আত্রাই প্রধান নদী। ঘুঘুদহ, গজারিয়া ও আড়িদহ বিল উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
অর্থনীতি:
সাঁথিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আলু, পিঁয়াজ, শাকসবজি, সরিষা প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ এবং বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য। বেঙ্গল মিটের মতো বড় মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানও অবস্থিত। পেঁয়াজ চাষে সাঁথিয়া বেশ এগিয়ে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
সাঁথিয়ায় ৯টি কলেজ, ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং ৫২টি মাদ্রাসা রয়েছে। সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয়, মিয়াপুর হাজী জসিমউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৬টি ক্লাব, ৪টি লাইব্রেরি, ১টি নাট্যদল, ৩টি সিনেমা হল, ১টি যাত্রাদল, এবং ১১টি খেলার মাঠ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ:
চুনাপাথর, বালিপাথর, চুন, কয়লা, এবং বালি প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে বনভোজন ও অবাধ শিকারের কারনে বন্যপ্রাণী সংকটাপন্ন।
যোগাযোগ:
১৮৪ কিমি পাকা রাস্তা, ৪০ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৬৪৮ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে।
স্বাস্থ্য:
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, এবং ১টি ক্লিনিক রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
এনজিও:
ব্র্যাক ও আশা উল্লেখযোগ্য এনজিও।