স্থপতি জেরিনা হোসেন: নগর পরিকল্পনা ও ঐতিহ্য রক্ষায় এক অক্লান্ত কণ্ঠ
দেশের নামকরা স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বাংলাদেশের নগরায়ন ও ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর বিতর্কিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন। তিনি সিলেট লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এবং পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত জনগণের সম্পদ এবং এর ব্যবস্থাপনা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে বলে তিনি মনে করেন। সিডিএ'র অর্থনৈতিক অসুবিধার দাবি নাকচ করে তিনি পরিকল্পিতভাবে সৈকতের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা আয়ের পন্থা বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
জেরিনা হোসেন কেবলমাত্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের বেসরকারি হস্তান্তরের বিরোধিতা করেননি, তিনি ঢাকার ঐতিহাসিক কমলাপুর রেল স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং চট্টগ্রামের যতীন্দ্র মোহন সেনের ভিটেবাড়ি ভেঙে ফেলার প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা অনুচিত এবং সৃজনশীল পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলি সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। নগর উন্নয়নের নামে অনুমোদিত উন্মুক্ত স্থান সীমিত করার প্রতি তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন এবং এগুলিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ইজারা দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন।
তিনি বিদেশ সফরের সময় সাধারণ মানুষের প্রতি বিদেশি উন্নয়ন প্রকল্পের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষকে অবহেলা করা হয় এবং বিত্তবানদের কথাই প্রাধান্য পায়। তিনি জনগণকে সক্রিয় ভাবে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জেরিনা হোসেনের দীর্ঘ কর্মজীবনে নগর পরিকল্পনা এবং ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার মাধ্যমে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ব্যাবহার করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তার কণ্ঠ নগর পরিকল্পনা এবং ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ।
সিলেট লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক জেরিনা হোসেনকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে সিলেটের সম্মিলিত নাগরিক সমাজ। বহিষ্কারের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নেতৃবৃন্দ। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।