বাংলাদেশের পরিবেশ: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের পরিবেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনন্য ও জটিল। ভৌগোলিক অবস্থান, ঋতুবৈচিত্র্য, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন- সব মিলিয়ে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাশ হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বন উজাড়, শিল্পায়ন ও দূষণের ফলে পরিবেশ দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
- *পরিবেশগত অবস্থা:** বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপগুলির একটি, অসংখ্য নদী, বিশাল ম্যানগ্রোভ বন (যেমন সুন্দরবন) এবং দীর্ঘতম বালুময় সৈকত রয়েছে। কিন্তু এসব প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি (বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়) দেশকে পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
- *পরিবেশ দূষণ:** বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়া জেলাগুলি পরিবেশগতভাবে সর্বাধিক দূষিত। শিল্পকারখানা, যানবাহন, কৃষি রাসায়নিক, এবং ঘরোয়া বর্জ্য দূষণের প্রধান উৎস। হাজারীবাগের চামড়া শিল্প ও বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ উদ্বেগজনক। ভূগর্ভস্থ পানির আর্সেনিক দূষণ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
- *পরিবেশের অবক্ষয়:** বন উজাড়, জলাভূমি হ্রাস, ভূমিক্ষয়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিবেশের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। চিংড়ি চাষের জন্য ম্যানগ্রোভ বনের ধ্বংস, উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি উদ্বেগের বিষয়। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের লবণাক্ততা বেড়েছে।
- *প্রাকৃতিক দুর্যোগ:** বন্যা বাংলাদেশের একটি প্রধান দুর্যোগ। ১৭৬৯ সাল থেকে বহুবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, যার ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
- *পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ:** ১৯৯১ সালে জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা (নিম্যাপ) প্রণয়ন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে। পরিবেশ শিক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ।
- *সুন্দরবন:** পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- *জলবায়ু পরিবর্তন:** গ্রীনহাউজ প্রভাব ও বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলাদেশে গুরুতর পরিবেশগত প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব।