টেকসই উন্নয়ন

টেকসই উন্নয়ন: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ পৃথিবী

টেকসই উন্নয়ন (Sustainable Development) একটি এমন নীতি যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে, এবং একই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের ক্ষমতাও অক্ষুণ্ণ রাখে। এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিকগুলিকে সমন্বিত করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

  • *ঐতিহাসিক পটভূমি:**

টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি ১৮ শতকের ইউরোপ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। জন ইভলিনের ১৬৬২ সালের 'সিলভা' প্রবন্ধে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পরবর্তীতে, হ্যান্স কার্ল ফন কার্লোভিটস ১৭১৩ সালে 'সিলভিকালতুরা ইকোনমিক্স' গ্রন্থে বন ব্যবস্থাপনার টেকসই পদ্ধতির উপর আলোকপাত করেন। এই দুই ব্যক্তির ধারণাই পরবর্তীকালে বনবিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনে প্রভাব ফেলে।

১৯৬২ সালে র‍্যাচেল কারসনের 'সাইলেন্ট স্প্রিং' বই পরিবেশগত সচেতনতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ১৯৭২ সালে 'ক্লাব অফ রোম' এর 'লিমিটস টু গ্রোথ' প্রতিবেদন ও 'ব্লুপ্রিন্ট ফর সার্ভাইভাল' বই টেকসই উন্নয়নের প্রতি বিশ্বের নজর আকর্ষণ করে।

১৯৮৭ সালে, ব্রুন্ডটল্যান্ড কমিশন 'আওয়ার কমন ফিউচার' (ব্রুন্ডটল্যান্ড রিপোর্ট) প্রকাশ করে, যা টেকসই উন্নয়নের একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে এবং এটি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এই রিপোর্টে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে এমন উন্নয়ন যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে এবং একইসাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বজায় রাখে।

  • *গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও প্রতিষ্ঠান:**
  • ১৯৯২ সালের রিও দি জেনেরিও আর্থ সামিটে টেকসই উন্নয়নের উপর প্রথম বৈশ্বিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, এবং এজেন্ডা ২১ গৃহীত হয়।
  • ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) গ্রহণ করা হয়, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
  • জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং দেশগুলোর সরকার টেকসই উন্নয়ন অর্জনে কাজ করছে।
  • *টেকসই উন্নয়নের মূল উপাদান:**

টেকসই উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশগত সুরক্ষাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ইত্যাদি এর কিছু মূল উপাদান।

  • *সমালোচনা:**

টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচিত হয়েছে। কিছু মহলে এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উন্নয়ন

টেকসই

বর্তমান

ভবিষ্যৎ

চাহিদা

ক্ষমতা

পূরণ

বজায় রাখা

সম্পদ

প্রকৃতি

পরিবেশ

মানব

সমাজ

অর্থনীতি

সামাজিক

পরিবেশগত

ন্যায়সঙ্গত

ভারসাম্যপূর্ণ

মূল তথ্যাবলী:

  • টেকসই উন্নয়ন মানে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণ
  • অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিকের সমন্বয়
  • ১৯৮৭ সালের ব্রুন্ডটল্যান্ড রিপোর্ট টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দলিল
  • ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) গৃহীত
  • টেকসই উন্নয়নে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা গুরুত্বপূর্ণ