কোটা সংস্কার আন্দোলন: অর্থনীতিতে অভাবনীয় ক্ষতি
গত কয়েকদিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে। সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট ও ইন্টারনেট বন্ধের ফলে অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ই-কমার্স, মোবাইল আর্থিক সেবা, রফতানি-আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। চট্টগ্রাম বন্দরে ৫ দিনে ১১০৮ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে কেবল কাস্টমস। পোশাক খাতে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পে কারখানা বন্ধ থাকার ফলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, প্রতিদিন ১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকার মত। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারনে আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণেও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এক সপ্তাহে ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির দায় বহন করতে হবে সরকার, বেসরকারী খাত ও সাধারণ মানুষকে। এছাড়াও, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে: বিজিএমইএ ৬৪০০ কোটি টাকা, বিকেএমইএ ১৬ কোটি ডলার( প্রায় ১৭২৮ কোটি টাকা), চট্টগ্রাম কাস্টমস ১১০৮ কোটি টাকা , সরকারি দপ্তর ৮০০ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে ৩০০-৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একটা মত হচ্ছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জনিত অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এই ক্ষতি কেবলমাত্র আর্থিক নয়, বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজেরও ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতির প্রভাব: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রফতানি, আমদানি, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, কারখানার উৎপাদন, সরকারি রাজস্ব এবং সাধারণ মানুষের জীবিকা।
পরবর্তী পদক্ষেপ: অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় সচলকরণ, আন্তর্জাতিক আস্থা পুনরুদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ।
১৮ দিনের হরতাল-অবরোধ: অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি
করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার পর অর্থনীতি এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়েছে। ১৮ দিনের হরতাল-অবরোধের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতি ১ লাখ ৮ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকা, পণ্য পরিবহনে হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এফবিসিসিআই ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির আরও বেশি ক্ষতি হবে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। শিল্পোৎপাদন কমেছে, রপ্তানি আদেশ কম আসার আশঙ্কা রয়েছে, ঋণের প্রবাহ কমেছে, বিনিয়োগের গতি ফিরতে বেশি সময় লাগবে। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, পিআরআই, ডিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এবং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ এই ক্ষতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
পাকিস্তানে ইন্টারনেট বন্ধ: বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি
ইন্টারনেট বিভ্রাট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করার ফলে পাকিস্তান ২০২৪ সালে ১৬২ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নির্বাচন, আন্দোলন ও তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮ বার ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়, যার ফলে প্রায় ৯ কোটি ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফেব্রুয়ারিতে এক্স (সাবেক টুইটার) বন্ধ থাকার ফলে ১৬৪ কোটি ডলার এবং বেলুচিস্তানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে ১১৮ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। নেটব্লকসের তৈরি কস্ট অব শাটডাউন টুল (সিওএসটি) ব্যবহার করে এই হিসাব করা হয়েছে। পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ) এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারের সময়ও ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।