সেদনায়া কারাগার (আরবি: سجن صيدنايا, সাজন সাইদনায়া), যেটিকে "মানব কসাইখানা" (المسلخ البشري) নামেও অভিহিত করা হয়, সিরিয়ার দামেস্কের ৩০ কিলোমিটার উত্তরে রিফ দামাস্কাস অঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক কারাগার ছিল। সিরিয়ার আসাদ সরকারের দ্বারা পরিচালিত এই কারাগারটি গৃহযুদ্ধের সময় সরকারবিরোধী বিদ্রোহী, রাজনৈতিক বন্দি এবং বেসামরিক নাগরিকদের আটক রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন অনুসারে, সেদনায়া কারাগার অত্যাচার, যৌন নির্যাতন এবং গণহত্যার জন্য কুখ্যাত ছিল। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR) অনুমান করে যে গৃহযুদ্ধের শুরু থেকে ৩০,০০০-এরও বেশি বন্দী এই কারাগারে নির্যাতন ও গণ-ফাঁসির শিকার হয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৫,০০০ থেকে ১৩,০০০ মানুষ সেখানে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
কারাগারটি দুটি ভবন নিয়ে গঠিত ছিল, যেখানে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ বন্দী ধারণ ক্ষমতা ছিল। এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল এবং সিরিয়ার সামরিক পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত হতো। বন্দিদের সেদনায়ায় পাঠানোর আগে অন্যান্য কারাগারে আটকে রাখা হত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দিরা জানিয়েছেন যে, তাদের গোপন সামরিক আদালতে এক থেকে তিন মিনিটের মধ্যে অন্যায্য বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। বহু বন্দী কোনো বিচারের মুখোমুখিও হয়নি।
সেদনায়ায় নানা ধরণের অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো, যেমন লাগাতার মারধর, যৌন নির্যাতন, শিরচ্ছেদ, দগ্ধ করা এবং "উড়ন্ত কার্পেট" নামে পরিচিত এক বিশেষ ধরণের অত্যাচার। ২০১৭ সালে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর অভিযোগ করে যে মৃত বন্দিদের লাশ পোড়ানোর জন্য একটি দাহশালা তৈরি করা হয়েছিল। তবে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে মৃতদেহ কারাগারের বাইরে দাফন করা হত।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর, দামেস্কে বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রযাত্রার সময় কারাগারটি দখল করা হয়। বিদ্রোহীদের নিরাপদ প্রস্থানের শর্তে কারাগার প্রশাসন এটি তাদের হস্তান্তর করে। এরপর, কারাগারের “সাদা” অংশের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়, এবং বিদ্রোহীরা “লাল” অংশের বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়ায় ছিল। সেদনায়া কারাগার আসাদ শাসনের নিপীড়নের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। কারাগারে অন্তত দুটি "লবণের কক্ষ" ছিল যেখানে রেফ্রিজারেটেড মর্গের অভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হতো।
সেদনায়া কারাগারের বন্দিদের অভিজ্ঞতা এবং কারাগারের অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে তথ্য সাবেক বন্দিদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে জানা যায়। আর এই কারণে এই কারাগারের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়।