বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কিছু সশস্ত্র দলের উত্থান ও পতন ঘটেছে। এই সশস্ত্র দলগুলোর উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং প্রভাব বিভিন্ন সময়ে বৈচিত্র্যময় হয়েছে। কিছু দল স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিল, অন্যরা জাতীয়তাবাদী অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের অংশ ছিল। আবার কিছু দল অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র দল: সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সশস্ত্র দলগুলির মধ্যে একটি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর সশস্ত্র শাখা, ‘শান্তিবাহিনী’। এই সংগঠনটি ১৯৭২ সালে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল। এদের কার্যক্রম ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি হয়। শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র কার্যক্রমের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক অস্থিরতা ও সহিংসতা দেখা দিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শান্তিবাহিনীর উত্থান ও কার্যক্রমের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করেছে। তৎকালীন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, সরকারের অবহেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় এদের উত্থান ঘটে।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ): সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি নতুন সশস্ত্র সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছে। এরা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এদের উদ্দেশ্য বলে উঠে আসছে, আলাদা রাজ্য গঠন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়। কেএনএফ-এর সাথে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে।
গণবাহিনী: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী, ৭০-এর দশকে সক্রিয় ছিল। এরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এদের ব্যাপক সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গণবাহিনী নিষিদ্ধ হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সকল সশস্ত্র দলের উত্থান ও কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এদের কার্যক্রমের ফলে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এই সশস্ত্র দলগুলোর পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এবং কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নথিভুক্ত নয়, তাই ভবিষ্যতে আরো তথ্য পাওয়া গেলে বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে আপডেট দেওয়া হবে।