বিলাইছড়ি: রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী রমণীয় উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত বিলাইছড়ি উপজেলা, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়ার কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপজেলার ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অনন্য।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:
প্রায় ৭৪৫.৯১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিলাইছড়ি উপজেলার অবস্থান ২১°৫৪´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৭´ থেকে ৯২°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে জুরাছড়ি এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, দক্ষিণে রুমা এবং থানচি উপজেলা (বান্দরবান), পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং পশ্চিমে কাপ্তাই, রাজস্থলী এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা (বান্দরবান) বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী। রাইংখ্যং নদী এই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বিলাইছড়ির জনসংখ্যা ছিল ২৮,৫২৫ জন; পুরুষ ১৫১৭৪ জন এবং মহিলা ১৩৩৫১ জন। ধর্মীয় বিভাজনে ৩০৭৪ মুসলিম, ৪৬৭ হিন্দু, ২২০৯৫ বৌদ্ধ, ২৭৯৬ খ্রিস্টান এবং ৯৩ অন্যান্য। এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বম, মোরং, পাঙ্খো, চাক, রিয়াংখুমি, ম্রো প্রভৃতি।
প্রশাসন ও ইতিহাস:
বিলাইছড়ি থানা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এক সময় উপজাতীয় বিদ্রোহের ঘটনা প্রায়ই ঘটত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় দুই হাজার পাহাড়ি রাজাকার মিজো বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিয়েছিল। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং শান্তিবাহিনীর গঠন করেছিলেন। শান্তিবাহিনী দমনের জন্য ফারুয়া থানা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে শান্তিবাহিনী তাদের ঘাঁটি ত্রিপুরায় স্থানান্তর করে। ফলে ফারুয়া থানা বিলাইছড়ির অন্তর্ভুক্ত হয়।
অর্থনীতি:
কৃষি হলো বিলাইছড়ির অর্থনীতির মূল ভিত্তি (৭৩.৭৯%)। ধান, পাহাড়ি আলু, তুলা, আদা, বাঁশ ইত্যাদি এখানে উৎপন্ন হয়। কলা, কাঁঠাল, আনারস প্রধান ফল। অকৃষি খাতে ব্যবসা, চাকরি, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা, ভাড়া ইত্যাদি অন্যান্য আয়ের উৎস। লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ কুটিরশিল্প হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ৩২.৮%। উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
যোগাযোগ:
বিলাইছড়িতে পাকা রাস্তা ৯.৬১ কিমি এবং কাঁচা রাস্তা ৫৫৭.৫৯ কিমি। কাপ্তাই হ্রদ ও রাইংখ্যং নদী দিয়ে ইঞ্জিনবোট যোগে যোগাযোগ করা যায়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান:
মসজিদ ১৬টি, মন্দির ২টি, বৌদ্ধ মন্দির ৩৩টি, গীর্জা ৫টি এবং মাদ্রাসা ১টি রয়েছে।
বিলাইছড়ি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা এখানে আপডেট করব।