পানছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত পানছড়ি উপজেলা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। ৩৩৪.১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৩°১২´ থেকে ২৩°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫০´ থেকে ৯২°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা, পূর্বে দীঘিনালা উপজেলা এবং পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলা পানছড়ির সীমান্তবর্তী।
জনসংখ্যাগতভাবে পানছড়ি বেশ জনবহুল। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ৬২১৯৮; যার মধ্যে পুরুষ ৩১৩৫২ এবং মহিলা ৩০৮৪৬। ধর্মীয়ভাবে, এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই উপজেলার বর্ণিল সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চেঙ্গী নদী পানছড়ির প্রধান জলাশয়।
১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর পানছড়ি থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ঐতিহাসিক ঘটনার দিক থেকে পানছড়ি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৬ সালের জুন মাসে, দমদম, কালানাল ও ছনটিলায় শান্তিবাহিনীর অভিযানে অনেক মানুষ নিহত হন। অন্যদিকে, ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ লোগাং ইউনিয়নের দুদুকছড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসমর্পণ করে এবং শান্তিবাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধেও পানছড়ির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর, মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের শিলাছড়ি ক্যাম্পে গিয়ে আরও ভালো প্রশিক্ষণ নেয় এবং পাঁচটি কোম্পানী গঠন করে উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করে। পানছড়ি ক্যাম্প আক্রমণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শিক্ষার দিক থেকে, পানছড়ির গড় শিক্ষার হার ৪২.৩%। পানছড়ি কলেজ (১৯৯০) এবং পানছড়ি হাইস্কুল ও কলেজ (১৯৮১) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কৃষি, অকৃষি শ্রমিক, ব্যবসা, চাকরি প্রভৃতি এখানকার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। ধান, গম, আলু, আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল ও ফল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে পাকা, আধা-পাকা এবং কাঁচা রাস্তার সমন্বয়ে গঠিত। পানছড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার তুলনামূলকভাবে কম। স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত নয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এখানকার প্রধান স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক, ইউনিসেফ প্রভৃতি এনজিও এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করে। পানছড়ি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা।