শ্রমিকের দাম

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:৩৬ পিএম

বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি: এক অসমাপ্ত সংগ্রাম

বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো এর কর্মক্ষম জনশক্তি, বিশেষ করে শ্রমিকরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে এক অসমাপ্ত সংগ্রাম চলে আসছে। 'শ্রমিকের দাম', অর্থাৎ শ্রমিকদের মজুরি, একটি জটিল এবং বহুমুখী বিষয়। এখানে শুধুমাত্র মজুরির পরিমাণ নয়, মজুরি প্রদানের নিয়মিততা, কাজের পরিবেশ, শ্রমিকদের অধিকার, এবং সরকার ও মালিকপক্ষের ভূমিকা সবকিছুই জড়িত।

জাতীয় ন্যূনতম মজুরির অভাব: বাংলাদেশে কোনো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। বিভিন্ন খাতে খাতওয়ারী মজুরি নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু সেগুলো দারিদ্র্যসীমার অনেক নীচে থাকে, এবং অনিয়মিতভাবে প্রদান করা হয়। ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার একটি মজুরি কমিশন গঠন করে ১৫৫ টাকা 'জাতীয় ন্যূনতম মজুরি' নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা: গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। এই খাতের শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ন্যায্য মজুরি, বকেয়া মজুরি, শ্রমিক নির্যাতন ও ছাঁটাই বন্ধ এবং কাজের উন্নত পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সরকার ১২,৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে, যা আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবীর অনেক কম। এই আন্দোলনের সময় কয়েকজন শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছেন।

অন্যান্য খাতের শ্রমিকরা: পোশাক শিল্প ছাড়াও চা শিল্প, নির্মাণ খাত, কৃষি খাত, এবং অন্যান্য অসংখ্য খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি অত্যন্ত কম এবং অনিয়মিত। এই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে মজুরির কোন বৃদ্ধি হয় না।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শ্রমিকদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে মজুরির সামান্য বৃদ্ধি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়।

সরকার ও মালিকপক্ষের ভূমিকা: সরকার মজুরি পুনর্নির্ধারণের কথা বলে, কিন্তু মালিকপক্ষের অনীহা ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার কারণে তা বাস্তবায়িত হয় না। শ্রম আইন প্রয়োগে সরকারের ভূমিকা দুর্বল।

সমাধানের পথ: শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত মজুরি নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শ্রম আইনের কঠোর প্রয়োগ, শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন গঠন, এবং সরকার ও মালিকপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই।
  • পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন চলে আসছে।
  • দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শ্রমিকদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
  • শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত মজুরি নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, শ্রম আইনের প্রয়োগ এবং শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন প্রয়োজন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - শ্রমিকের দাম

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

প্রতিষ্ঠান:বিজিএমইএবিকেএমইএ