ট্রেড ইউনিয়ন: বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
ট্রেড ইউনিয়ন, অর্থাৎ শ্রমিক সংঘ, হলো শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের জীবিকা উন্নয়নের জন্য গঠিত একটি সংগঠন। এটি শ্রমিকদের একত্রিত করে তাদের সামूहিকভাবে দর কষাকষির শক্তি প্রদান করে, যা একক শ্রমিকের পক্ষে অসম্ভব। বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ইতিহাস ব্রিটিশ ভারতের সময়কাল থেকে শুরু হয়ে আজও অব্যাহত রয়েছে।
- *প্রাথমিক পর্যায়:** ১৮৯০ সালে বম্বে মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সূচনা করে। ১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) এর প্রতিষ্ঠা এবং ১৯২০ সালে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (এআইটিইউসি) এর গঠন এই আন্দোলনে গতি প্রদান করে। ১৯২৪ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন চরমে ওঠে, যাতে এম.এন. রায়, মুজাফ্ফর আহমদ, এস.এ. ডাঙ্গে, শওকত ওসমানী প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক ব্যবস্থা (কানপুর ও মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা) গ্রহণ করলেও আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়নি।
- *পাকিস্তান আমল:** ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। নেতৃত্বের ঘাটতি এবং ইউনিয়নগুলির মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে আন্দোলন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ৩০টি ট্রেড ইউনিয়ন ছিল, যা অবিভক্ত ভারতের ১,৯৮৭টির তুলনায় অত্যন্ত কম।
- *স্বাধীন বাংলাদেশ:** স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে পরিচালিত হয়। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির হস্তক্ষেপ এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সুবিধাবাদী মনোভাব আন্দোলনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। বিশ শতকের আশির দশকে সামরিক সরকার ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতা নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন কিছুটা গতি পায়, তবে স্কপও তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
- *বর্তমান অবস্থা:** বর্তমানে বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন জটিল এবং বহুমুখী। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য সংগঠনের স্বাধীনতা, নেতৃত্বের দায়িত্ববোধ এবং সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন।