তোপখানা: যুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
তোপখানা বা আর্টিলারি হলো সামরিক বাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুকে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ভারী অস্ত্রসমূহ পদাতিক অস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী এবং দূর থেকে ধ্বংসাত্মক আঘাত হানতে পারে। প্রাথমিক তোপখানার উন্নয়ন প্রধানত দুর্গ ও প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল ভেদ করার উপর কেন্দ্রীত ছিল। এই কারণে প্রথম যুগের তোপগুলি ভারী ও স্থির ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হালকা ও চলাচলযোগ্য ফিল্ড আর্টিলারি তৈরি হতে থাকে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে সহজে স্থানান্তরিত করা সম্ভব। আধুনিক স্বচালিত তোপখানা যানবাহন অত্যন্ত বহুমুখী এবং চলাচলযোগ্য, এবং এটি সেনাবাহিনীর মোট অস্ত্রশস্ত্রের বৃহৎ অংশ গঠন করে।
প্রাথমিকভাবে 'আর্টিলারি' শব্দটি অস্ত্রধারী যেকোনো সৈন্যদলকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বারুদ ও কামানের আবির্ভাবের পর এই শব্দটি মূলত কামান বোঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে। আধুনিক অর্থে এটি সাধারণত শেল ছোড়া বন্দুক, হাউইৎজার, মর্টার এবং রকেট আর্টিলারিকে বোঝায়। কিছু সেনাবাহিনীতে তোপখানা শাখা ক্ষেত্র, উপকূলীয়, বিমান-বিরোধী এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক আর্টিলারি সহ সকল ধরণের তোপ পরিচালনা করে। অন্য কিছু সেনাবাহিনীতে এগুলি পৃথক অস্ত্র শাখা।
তোপখানার ইতিহাস অত্যন্ত দীর্ঘ। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরণের অবরোধ ইঞ্জিন যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ সালে সিরাকিউজে প্রথম পরিচিত ক্যাটাপুল্ট বিকশিত হয়েছিল। বারুদের আবিষ্কারের আগে যান্ত্রিক শক্তির উপর নির্ভর করে তোপখানা কাজ করতো, যা গুলির গতি সীমাবদ্ধ করতো। কিন্তু বারুদের প্রবর্তনের পর তোপখানার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। নেপোলীয় যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তোপখানা অনেক মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। জোসেফ স্তালিন ১৯৪৪ সালে একটি ভাষণে তোপখানাকে
যুদ্ধের ঈশ্বর
বলে উল্লেখ করেছিলেন।
আজকের আধুনিক তোপখানা অত্যন্ত উন্নত এবং যুদ্ধের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ক্ষমতা এবং নির্ভুলতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।