বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: একটি ভয়াবহ বাস্তবতা
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটি একটি জাতীয় সংকট যা সকলের নজর কেড়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর শত শত শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং এর মধ্যে অনেকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বছর ৩৫৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২২ জন মারা গেছে এবং ৩৩৪ জন আহত হয়েছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ধর্ষণ সংক্রান্ত সংবাদ সংখ্যা ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, উদ্বেগের বিষয় হলো ২০১৮ সালে ধর্ষণ ছাড়া আরও ৭৭টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ২৭৬টি শিশু হত্যা ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২২৭ জন মারা গেছে। ২০১৮ সালে ১৭৭টি বাল্যবিবাহের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে পারিবারিক কলহ, সম্পদের জন্য, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে, চাঁদা না দেয়া, মেয়ে হয়ে জন্মানোসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শুধুমাত্র মেয়ে শিশুরাই নয়, ছেলে শিশুরাও এ ধরণের অপরাধের শিকার হচ্ছে।
২০২৪ সালেও পরিস্থিতি একই রকম। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ১৬ জন মারা গেছে। ঢাকার ওয়ারীতে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। বরিশালের গৌরনদীতে দশ বছরের এক শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিলেটে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শিশু নির্যাতন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচারহীনতা এবং দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া এ ধরণের অপরাধের প্রধান কারণ। শিশুদের সুরক্ষার জন্য জাতীয় শিশু সুরক্ষা কাঠামো গঠন, শিশু বিষয়ক যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণে প্রধান কর্তৃপক্ষ সক্রিয় করা, শিশুদের জন্য পৃথক বাজেট, শিশুদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার বন্ধ এবং জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। এছাড়া, অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসা দরকার। শিশুদের যৌন নির্যাতন ও আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, মূল্যবোধের উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন এবং কমিউনিটি লেভেলে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।