প্রতিবেদন: তথ্যের সংগঠিত উপস্থাপনা
প্রতিবেদন হলো একটি নির্দিষ্ট শ্রোতা ও উদ্দেশ্যের জন্য তথ্যের সংগঠিত উপস্থাপনা। এটি মৌখিকভাবেও হতে পারে, তবে লিখিত আকারেই বেশি প্রচলিত। "প্রতিবেদন" শব্দটি ইংরেজি "Report" শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ, যার অর্থ সমাচার, বিবরণী বা বিবৃতি। কোনো ঘটনা, পর্যবেক্ষণ, বা তথ্য-উপাত্তের বর্ণনামূলক বিবরণকে প্রতিবেদন বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন, সংবাদ প্রতিবেদন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন রয়েছে।
আদর্শ প্রতিবেদনে থাকে:
- স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও শ্রোতা
- সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ভাষা
- তথ্যের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা
- তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও উপসংহার
- চিত্র, সারণি, লেখচিত্র ইত্যাদির ব্যবহার
প্রতিবেদন লেখককে প্রতিবেদক বলা হয়। তিনি তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। প্রতিবেদন লেখার জন্য Who, What, When, Where, Why, এবং How এই ৬টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরী। একটি আদর্শ প্রতিবেদন সাধারণত দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৭৮৬ সাল থেকে বাংলায় বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদন প্রচলিত। প্রথমে গোপনীয় হলেও, ১৮৫৯ সাল থেকে এটি মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হতে থাকে। এই প্রতিবেদনগুলি প্রশাসনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে, যেমন রাজনৈতিক, ভূমি, রাজস্ব, শিক্ষা ইত্যাদি। ১৮৭৭ সালে, এইচ.সি. কারের নেতৃত্বে একটি কমিশন বাংলায় পাট চাষ এবং ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে রংপুর, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, নোয়াখালী, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ, ২৪ পরগণা, হুগলি ও বর্ধমানের পাট চাষের তথ্য তুলে ধরা হয়। ১৮৩০ থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত পাট চাষের পরিমাণ এবং রপ্তানির তথ্য এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়। আরও রয়েছে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) যা সরকারি কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৮৩৪ সাল থেকে এটি প্রচলিত, যদিও এর ফরম্যাট ও ব্যবস্থাপনা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পর গভর্নরের পাক্ষিক প্রতিবেদন শুরু হয়, যা ব্রিটিশ আমলে বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণ করে।