গৌরনদী

গৌরনদী: বরিশালের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা

বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার অন্তর্গত গৌরনদী উপজেলা একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। ২২°৫৩´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৮´ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ১৫০.৫৪ বর্গ কিমি। ১৭৭৪ সালে গৌরনদী থানা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮২ সালে এটি উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৯৬ সালে গৌরনদী পৌরসভা গঠিত হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

গৌরনদীর ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। ১৮০৬ সালে ঢাকা জেলা থেকে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৩০ সালের ৫ই মার্চ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি. গ্যারেটের সুপারিশে গৌরনদী থানা পালরদী বন্দরে স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৯ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা গৌরনদী থানা আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয় অনেক নিরীহ মানুষ। উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে আল্লাহর মসজিদ (কসবা) বিদ্যমান।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

গৌরনদী উপজেলার উত্তরে কালকিনি, দক্ষিণে উজিরপুর, পূর্বে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও কালকিনি, এবং পশ্চিমে আগৈলঝারা ও কোটালিপাড়া উপজেলা অবস্থিত। আড়িয়াল খাঁ, নুন্দা ও অগরপুল এর প্রধান নদী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উপজেলার জনসংখ্যা ১৮৮৫৮৬; পুরুষ ৯২২০৯, মহিলা ৯৬৩৭৭। মুসলিম ১৫৮৯৮৪, হিন্দু ২৭৮৬৯, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী কিছু সংখ্যক।

অর্থনীতি:

গৌরনদীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আলু, পান, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। কুটির শিল্প যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি:

গৌরনদীতে শিক্ষার হার ৬০.৯%। গৌরনদী কলেজ (১৯৬৪), নলচিড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বারথি তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৫) সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকেও গৌরনদী সমৃদ্ধ; এখানে লাইব্রেরি, ক্লাব, সিনেমা হল, খেলার মাঠ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

উপসংহার:

ঐতিহাসিক গৌরনদী বরিশালের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা যা কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য উল্লেখযোগ্য। এই উপজেলার উন্নয়নে সরকারের বিশেষ নজর দরকার।

মূল তথ্যাবলী:

  • গৌরনদী বরিশাল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
  • ১৭৭৪ সালে গৌরনদী থানা প্রতিষ্ঠা
  • ১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত
  • মুক্তিযুদ্ধে গৌরনদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • কৃষি ও কুটির শিল্পের উপর অর্থনীতি নির্ভরশীল
  • সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য