লামা থানা: ইতিহাস, প্রশাসন ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট হল লামা থানা। ১৯২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ শাসনামলে এই থানার প্রতিষ্ঠা হয়। লামা থানা কেবলমাত্র একটি থানা নয়, এটি লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। থানার ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উঠে আসে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৫ তম বোমাং রাজা, সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ অং শৈ প্রু চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে দুই দফায় লামা থানার দারোগা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
লামা থানার আওতাধীন এলাকায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। মার্মা, ত্রিপুরা, মুরং, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও খেয়াং উপজাতিসহ বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে। লামা থানার আওতাধীন লামা শহরে একটি মাতামুহুরী কলেজ ও আলীকদম সেনানিবাস রয়েছে। উপজেলার জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লামা উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১,৩৯,৬৮১।
মুক্তিযুদ্ধের সময় লামা উপজেলা ১নং সেক্টরের অধীনে ছিল। লামায় পাকিস্তানের নিয়মিত বাহিনীর তেমন সক্রিয়তা ছিল না, তবে রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তান সমর্থক ফুরুইক্ষা বাহিনী ব্যাপক অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ ইপিআর এবং তার দল লামা থানা আক্রমণ করে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে লামা থানার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটেছে, যদিও জেলা হিসাবে ঘোষণা পেলেও তা স্বল্পকালীন ছিল।
বর্তমানে লামা থানার প্রধান দায়িত্ব হল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। লামা থানার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, জনশক্তি উন্নয়ন এবং জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। লামা থানা পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে আশা করা যায়। তবে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য সমস্যার মোকাবেলায় লামা থানার আরও সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।