প্রশাসন: বাংলার ঐতিহাসিক ধারা
বাংলার প্রশাসনিক ইতিহাস বহু যুগ ধরে বিভিন্ন রাজবংশ ও শাসকের অধীনে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে, মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, তুর্কি-আফগান, মুঘল ও অবশেষে ব্রিটিশ শাসনামল পর্যন্ত, প্রশাসনিক ব্যবস্থা ক্রমবিকাশে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে।
প্রাচীন যুগ:
এ যুগে রাজতন্ত্র ছিল প্রধান শাসন ব্যবস্থা। গঙ্গারিডাই রাজ্যের উন্নত সামরিক ও প্রশাসনিক সংগঠনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে বাংলা একটি প্রদেশ হিসেবে শাসিত হতো বলে ধারণা করা হয়। গুপ্ত যুগে ‘মহারাজা’ উপাধি গ্রহণ করে রাজা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হন। প্রশাসনিক বিভাগগুলো ছিল ‘ভুক্তি’, ‘বিষয়’, ‘মন্ডল’, ‘বীথি’ এবং ‘গ্রাম’। ভূমি ছিল অর্থনীতির প্রধান উৎস এবং ভূমি দান-বিক্রয় সংক্রান্ত তথ্য তাম্রশাসনে পাওয়া যায়।
মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে তুর্কি-আফগান শাসনামলে পুরাতন প্রশাসনিক সংগঠনগুলিকে ধরে রাখা হয়। ইখতিয়ারউদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজীর আগমনের পর বাংলায় মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ইলিয়াস শাহী ও হোসেন শাহী বংশ দীর্ঘদিন বাংলা শাসন করে। সুলতান ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। প্রশাসন অর্থ, সংবাদ, পুলিশ, বিচার ও সামরিক বিভাগে বিভক্ত ছিল। ভূমি রাজস্ব, শুল্ক এবং নানা ধরনের কর ছিল রাজস্বের উৎস।
মুঘল যুগ:
মুঘলদের আগমনের পর বাংলা সুবাহে পরিণত হয়। সুবাহদার, দীউয়ান, বখশী, সদর, কোতওয়াল, মীরবহর প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিলেন। জমিদার ব্যবস্থা রাজস্ব আদায়ের প্রধান পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়। রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনে জমিদার, তালুকদার, আমিল, কানুনগো, মুকাদ্দম প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপনিবেশিক যুগ:
ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসন ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান রাজস্ব বৃদ্ধি ও সুশাসনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কর্ণওয়ালিস কোড প্রশাসন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংস্কার নিয়ে আসে। স্থায়ী বন্দোবস্ত, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার - সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়। ক্রমশ ভারতীয়দেরকে প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের বিকাশ ঘটে।