রাখাইন

রাখাইন: বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী, যারা আরাকানি ও মগ নামেও পরিচিত। এরা মূলত মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৮ শতকের শেষের দিকে বার্মিজ রাজাদের আক্রমণের পর অনেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে তারা কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে।

রাখাইন শব্দটির উৎপত্তি পালি ভাষা থেকে। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১৫ সালে রাখাইন জাতির আবির্ভাব ঘটে। ১৭৮৪ সালে বার্মিজ রাজা বোদোপয়ার আরাকান জয়ের পর ব্যাপক সংখ্যক রাখাইন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে অনেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী দ্বীপে আশ্রয় নিয়ে বসতি স্থাপন করে, পরবর্তীতে মৌদুবি, বড়বাইশদিয়া, ছোটবাইশদিয়া, কুয়াকাটা, টিয়াখালী, বালিয়াতলী, বগী ইত্যাদি দ্বীপ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন প্যোঅং, উঃগোম্বাগ্রী ও অক্যো চৌধুরী ছিলেন তাদের নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম।

রাখাইনদের একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। তাদের ভাষা ইন্দো-মঙ্গোলীয় পরিবারের অন্তর্গত। তারা হাজার বছর ধরে প্রা-ঝে (ঐতিহাসিক নাটক), ওয়াচ্ছার নাচ (শুকুরের নৃত্য) প্রভৃতি ঐতিহ্য ধারণ করে আসছে। তাদের জীবিকা কৃষি, মৎস্যচাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌকা নির্মাণ, কারুশিল্প ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। রাখাইনদের স্থাপত্য, চারুকলা, সংগীত, নৃত্য, এবং অন্যান্য ঐতিহ্যগত শিল্পকলাও সমৃদ্ধ।

ব্রিটিশ শাসনামলেও রাখাইনদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে কক্সবাজারের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করেন। এই সময়ে অনেক ভূস্বামী তাদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে রাখাইনদের পুনর্বাসন করে।

বর্তমানে, রাখাইন সম্প্রদায়ের সংখ্যা এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন, তবে তারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মূল তথ্যাবলী:

  • রাখাইনরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী।
  • ১৮ শতকে বার্মিজ আক্রমণের পর অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
  • তাদের মূল বসতি কক্সবাজার ও পটুয়াখালী।
  • রাখাইনদের একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে।
  • তারা কৃষি, মৎস্যচাষ, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।