খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের মুকুট

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি রমণীয় শহর হল খাগড়াছড়ি। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত এই শহরটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং খাগড়াছড়ি জেলা ও উপজেলার প্রশাসনিক সদর। ৬৩.৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৬৯,৪৩৪ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী), যা ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮,৮৭৫ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। খাগড়াছড়ি পৌরসভা দ্বারা শাসিত এই শহরের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হল সড়কপথ। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দর এই শহরের নিকটতম বিমানবন্দর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরের আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

প্রাচীনকালে ‘তারক’ নামে পরিচিত খাগড়াছড়ির বর্তমান নামকরণের পেছনে রয়েছে নলখাগড়ার বন। ছড়া নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত এই বনের নামানুসারেই শহরের নামকরণ হয়। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল কখনো ত্রিপুরা, কখনো আরাকান রাজবংশের অধীনে ছিল। ত্রিপুরা রাজারা ৩৬৩ বছর (৫৯০-৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ) এবং আরাকান রাজারা ২৯৭ বছর (৯৫৩-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ) শাসন করে। পরবর্তীতে মুসলিম শাসন এবং ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম থেকে পৃথক জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি পৌরসভা গঠিত হয়।

জনসংখ্যাগত ও অর্থনৈতিক দিক:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, খাগড়াছড়ি শহরের জনসংখ্যা ছিল ৬৯,৪৩৪ জন। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৌরসভার জনসংখ্যা ৫৮,৮৭৫। ধর্মীয় দিক থেকে এখানে মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে। অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষি, যদিও অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন ব্যবসা, চাকুরী ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি:

খাগড়াছড়িতে কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি আদিবাসীদের নান্দনিক সংস্কৃতি এই অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বিভিন্ন আদিবাসী উৎসব, যেমন চাকমাদের বিঝু উৎসব, মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব এবং ত্রিপুরাদের বৈশাখী উৎসব এখানে উদযাপিত হয়।

দর্শনীয় স্থান:

খাগড়াছড়ির রমণীয় প্রকৃতি এবং ঐতিহাসিক স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রামগড় লেক ও ঝুলন্ত সেতু, রাইফেলস স্মৃতিস্তম্ভ (রামগড়) ও আলুটিলা উল্লেখযোগ্য।

সারসংক্ষেপে:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। এটি একটি উন্নয়নশীল শহর যা আপনার ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ স্থান হতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • খাগড়াছড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর
  • ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়
  • চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস
  • প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে
  • কৃষি, ব্যবসা ও চাকুরীর উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি