মেলা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লৌকিক উৎসব
বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম আকর্ষণ হল মেলা। এটি ধর্মীয়, সামাজিক, বাণিজ্যিক, বা অন্যান্য বিভিন্ন কারণে মানুষের একত্রিত হওয়ার একটি স্থান। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই মেলার ঐতিহ্য বিদ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের মেলার স্বাতন্ত্র্য রয়েছে তার গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত থাকার কারণে। এই লেখায় আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন মেলার ইতিহাস, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব।
ঐতিহাসিক দিক:
মেলার উৎপত্তি সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন, তবে গবেষণায় জানা যায় যে, গ্রামীণ হাট থেকে মেলার ধারণা উৎপন্ন হয়েছে। অতীতে রাজা, জমিদার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মেলার আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা করত। ধর্মীয় উৎসব, ঋতুভিত্তিক উৎসব, কৃষি উৎসব, ও সামাজিক উপলক্ষে মেলা বসত।
প্রকারভেদ:
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকারের মেলা আয়োজন করা হয়:
• ধর্মীয় মেলা (দুর্গাপূজার মেলা, মহররমের মেলা, রথের মেলা): এই মেলাগুলিতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যকলাপও অনুষ্ঠিত হয়।
• ঋতুভিত্তিক মেলা (বৈশাখী মেলা, পৌষ মেলা): ঋতু কেন্দ্রিক উৎসবের সাথে জড়িত।
• কৃষি মেলা (উৎপাদিত কৃষি উৎপাদনের প্রদর্শনী): কৃষিকাজ সংক্রান্ত।
• সাংস্কৃতিক মেলা (একুশে বইমেলা, বিজয় মেলা): সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কেন্দ্রিক।
• স্মারক মেলা (লালন মেলা, রবীন্দ্র মেলা): বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণে।
• বাণিজ্যিক মেলা (কম্পিউটার মেলা, মোবাইল মেলা): পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়।
উল্লেখযোগ্য মেলা:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য মেলার মধ্যে আছে ধামরাইয়ের রথের মেলা, মজমপুরের মেলা, সোনারগাঁওয়ের লোকশিল্প মেলা, একুশে বইমেলা, মাইজভান্ডারীর মেলা, মহাস্থানগড়ের মেলা ইত্যাদি।
বর্তমান অবস্থা:
আধুনিকতার প্রভাবে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলার জৌলুস কমে যাচ্ছে। তবে, আধুনিক মেলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মেলার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার:
মেলা বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি মানুষকে একত্রিত করে, সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জীবিত রাখে। মেলার ঐতিহ্য জীবিত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।