জসীমউদ্দীন: বাংলা সাহিত্যের পল্লীকবি
জসীমউদ্দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৪ মার্চ ১৯৭৬) বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। 'পল্লীকবি' উপাধিতে ভূষিত এই কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক আধুনিক বাংলা কবিতায় গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির অপূর্ব চিত্রায়ণের জন্য সুপরিচিত। তার কবিতায় গ্রামবাংলার মাটি, মানুষ, প্রকৃতির সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাকে নগর সভায় নিয়ে আসার কৃতিত্বের অধিকারী।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
জসীমউদ্দীনের জন্ম ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। তার পূর্ণ নাম মোহাম্মদ জমীর উদ্দীন মোল্লা। পিতা আনসার উদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষাজীবনের সূচনা ফরিদপুর হিতৈষী স্কুল ও ফরিদপুর জেলা স্কুলে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ. এবং এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯২৯ ও ১৯৩১)।
কর্মজীবন ও সাহিত্যকর্ম:
শিক্ষাজীবনের পর জসীমউদ্দীন পল্লী সাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে কাজ শুরু করেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোকসংগীত সংগ্রহ করেন। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৪৪ সালে শিক্ষকতা ত্যাগ করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার ও পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
জসীমউদ্দীনের সাহিত্যকর্মে গ্রামবাংলার জীবন, প্রকৃতি, মানুষের অভিজ্ঞতা বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। 'নকশী কাঁথার মাঠ', 'সোজন বাদিয়ার ঘাট', 'কবর' তার বিখ্যাত কবিতার মধ্যে অন্যতম। তিনি গ্রামীণ গানেরও সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন। 'জারী গান', 'মুর্শিদা গান' এরূপ দুটি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। তিনি নাটক, উপন্যাস, গল্পও লিখেছেন।
সম্মাননা ও মৃত্যু:
জসীমউদ্দীন প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮), বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৭৮) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী ফরিদপুরের অম্বিকাপুর গ্রামে সমাহিত হন।
জসীমউদ্দীন বাংলা সাহিত্যের এক আলোকিত নক্ষত্র। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তিনি চিরকাল মানুষের হৃদয়ে বসবাস করবেন।