কুষ্টিয়া: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের সম্মিলন
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত কুষ্টিয়া জেলা, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। ৫৪.১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরটি বাংলাদেশের ১৩তম বৃহত্তম ও খুলনা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া পৌরসভা সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে কুষ্টি নদীবন্দরের উত্তরসূরি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বন্দর ব্যবহার করত। পরবর্তীতে নীল চাষের প্রসারের সাথে সাথে কুষ্টিয়ার নগরায়ন শুরু হয়। ১৮৬০ সালে কলকাতার সাথে রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হলে কুষ্টিয়া শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হয়। ঐ সময়ে ‘রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ (১৮৯৬) এবং ‘মোহিনী মিল’ (১৯০৮) এর মতো প্রতিষ্ঠান এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়া জেলা ২৩º৪২΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩º৫৯΄ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৮৮º৫৫΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯º০৪΄ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এটি রাজধানী ঢাকা থেকে পশ্চিমে, খুলনা থেকে উত্তরে এবং রাজশাহী থেকে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। কুষ্টিয়া শহরে দুটি বাস টার্মিনাল এবং তিনটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। বিমানবন্দর না থাকলেও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ২০১৯ সালে কুষ্টিয়ায় বিমানবন্দর নির্মাণের আশ্বাস প্রদান করেছিলেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬৩ সালে ১০০ শয্যার সাথে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে (২০১৩-২০২৪)। কুষ্টিয়া জেলায় একাধিক সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে।
ছেউড়িয়ায় অবস্থিত লালন শাহের মাজার কুষ্টিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান। এছাড়াও কুষ্টিয়া পৌর ভবন, রজব আলী খান চৌধুরী ভবন, কোহিনুর ভিলা, বিজয় উল্লাস ভাস্কর্য, পালকি ও বেহারা ভাস্কর্য, শিকোড়ের সন্ধানে ভাস্কর্য, এবং বেশ কয়েকটি পার্ক কুষ্টিয়ার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বংশীতলা, মিলপাড়া, কুমারখালী প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংগ্রাম ছিল। কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজয় উল্লাস ভাস্কর্য এবং অন্যান্য স্মৃতিসৌধে অক্ষত থাকবে।
শিক্ষার দিক থেকে কুষ্টিয়া অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ এবং অন্যান্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। কুষ্টিয়ার কৃষি, ব্যবসা, শিল্প এবং পরিবহন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুষ্টিয়া একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর যার অতীত এবং বর্তমান সমানভাবে মনোমুগ্ধকর।