মাহবুব নামটি বাংলাদেশের বুকে একাধিক ব্যক্তির সাথে জড়িত, যাদের জীবন ও কর্মকাণ্ড দেশের ইতিহাস ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই লেখায় আমরা তাদের মধ্যে কয়েকজনের জীবনী সংক্ষেপে তুলে ধরব।
মাহবুব-উল আলম (১৮৯৮-১৯৮১): একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ১৮৯৮ সালের ১লা মে চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলবি নসিহ্উদ্দীন ছিলেন সমাজ সংস্কারক। ১৯১৬ সালে ফতেয়াবাদ এম.ই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন এবং কিছুদিন চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে মেসোপটেমিয়া যান এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং ১৯৫৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং 'জামানা' নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি 'পল্টন জীবনের স্মৃতি', 'মোমেনের জবানবন্দী', 'তাজিয়া', 'পঞ্চ অন্ন' সহ অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়েও তিনি ব্যাপক গবেষণা করেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার এবং একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৭ই আগস্ট চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী গোলাম মাহবুব (১৯২৭-২০০৬): ভাষা আন্দোলনের নেতা এবং রাজনীতিক। ১৯২৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে জন্ম। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-তে দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম রাষ্ট্রভাষা স্বর্ণপদক, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট পদক, তমদ্দুন মজলিশের মাতৃভাষা পদক, একুশে পদক সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ১৯শে মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
চৌধুরী মাহবুব উল আলম (১৯২৭-২০০৭): কবি, সাংবাদিক, লেখক ও ভাষা সৈনিক। ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি' রচনা করেন। ১৯২৭ সালের ৭ই নভেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। 'সীমান্ত' নামে একটি প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। দৈনিক 'স্বাধীনতা' পত্রিকার সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালে (মরণোত্তর) একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ (১৯১১-১৯৭৯): বিশিষ্ট বিচারপতি। ১৯১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগদান করেন এবং পরে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার 'মন্ত্রীর মামলা', 'কর্নেল ভট্টাচার্যের মামলা' ও 'পানের মামলা' -র ঐতিহাসিক রায় তার ন্যায়নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত। ১৯৭৯ সালের ৩রা এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।