সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ
১৯৩৬ সালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল পরিবেশে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (AISF) জন্ম হয়। ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের পর ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা আন্দোলনের মূলস্রোতে অংশগ্রহণ করে। কলেজ বন্ধ, বিক্ষোভ, বেআইনি ইশতেহার বিতরণ – এসব ঘটনা ছাত্রদের রাজনৈতিক জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
AISF-এর প্রতিষ্ঠাকালীন দর্শন ছিল জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল। ১৯ আগস্ট, ১৯৩৬ সালে লখনউতে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনে মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট এম.এ. জিন্নাহ সভাপতিত্ব করেন, আর ভাষণ দেন জওহরলাল নেহরু। এর পর থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের সাথে সাথে AISF-এর বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে থাকে, যেখানে তিন হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করতেন এবং জাতীয় নেতারা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন।
AISF-এর সদস্যরা কংগ্রেস, কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য অনুভব করতেন, যা পরবর্তীতে সংগঠনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।
জাতীয়তাবাদী দল ও কমিউনিস্টপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ ১৯৩৯ সালে মাদ্রাজে এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা ও নাগপুরে অনুষ্ঠিত অধিবেশনগুলিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৪০ সালে নাগপুর অধিবেশনে সংগঠনের চূড়ান্তভাবে ভাঙন ধরে। উভয় দলই ‘সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন’ নামটি ব্যবহার করলেও, ১৯৪৫ সালে জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কংগ্রেস’ নামে নতুন সংগঠন গঠন করে। এর পর থেকে AISF কমিউনিস্ট ছাত্র ফ্রন্টে পরিণত হয়, কমিউনিস্ট আদর্শ ও সাংগঠনিক কৌশল ব্যবহার করে ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। বহু প্রতিভাবান ছাত্রনেতা ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন এবং বামপন্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।