সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ আগস্ট, ১৯২৬ - ১৩ মে, ১৯৪৭): বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সুকান্ত ভট্টাচার্যের নামটি স্মরণীয় হয়ে রয়েছে একজন বিদ্রোহী এবং প্রগতিশীল কবি হিসেবে। মাত্র একুশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি যে অসাধারণ সাহিত্যকর্ম রচনা করে গেছেন তা বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।
১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণকারী সুকান্তের পৈত্রিক বাড়ি ছিল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঊনশিয়া গ্রামে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও তাঁর মধ্যে ছিল সাহিত্যের প্রতি অদম্য আগ্রহ।
কৈশোরকাল থেকেই কবিতা ও গল্প লেখা শুরু করেন সুকান্ত। স্কুলের পত্রিকায় ছোটো গল্প প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্য জীবনের সূচনা। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর রচনার প্রকাশ ঘটে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪৩ সালের মহামারী, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা - এ সব ঘটনার প্রতিবাদে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন।
সুকান্তের কবিতায় গণমানুষের দুঃখ-কষ্ট, তাদের অধিকারের দাবি ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ছাড়পত্র, পূর্বাভাস, মিঠেকড়া, অভিযান, ঘুম নেই, হরতাল, গীতিগুচ্ছ প্রভৃতি।
সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা 'দৈনিক স্বাধীনতা'-র ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে 'আকাল' নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন।
দুর্ভাগ্যবশত, মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় তিনি ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সুকান্তের কবিতায় আছে বিদ্রোহ, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং গণমানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা। তার লেখা শোষিত ও অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।
সুকান্তের স্বল্পায়ু জীবন ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। তার কবিতা আজও আমাদেরকে উদ্দীপ্ত করে এবং সাহস জোগায়।