বাংলাদেশের পর্যটন খাত: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের ভান্ডার। পাহাড়, নদী, বিল, হাওর, বন, ধর্মীয় স্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত ও ম্যানগ্রোভ—এ সব মিলিয়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরও বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। দেশীয় পর্যটকদের আধিপত্য থাকলেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা এখনো কম। ইউএসএইডের মতে, বাংলাদেশে আগমনকারী বিদেশিদের মাত্র ৫% পর্যটন উদ্দেশ্যে আসেন। বাকিরা গার্মেন্টস, উন্নয়ন প্রকল্প ও এনজিওর কাজে জড়িত।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন সূচক-২০২২ অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ২.২% এবং কর্মসংস্থানে ১.৮%। নেপালের মতো অবকাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৯%।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রচারের অভাব, জটিল ভিসা প্রক্রিয়া, বিমানবন্দরে হয়রানি, দুর্বল যাতায়াত ব্যবস্থা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ, দূরপাল্লার যাত্রায় অপ্রতুল বিশ্রাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা, এবং একাধিক সংস্থার দায়িত্বের কারণে সমন্বয়ের অভাব এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
নিরাপত্তার দিক থেকে পরিস্থিতি উন্নত হলেও পর্যটনবান্ধব নীতির অভাব রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ ১০৪টি স্পটে কাজ করছে। তবে, 'প্লিজ হেল্প মি' ইন্টারকম ও ইমার্জেন্সি বাটন সার্ভিসের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে পর্যটন খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন পর্যটকের ব্যয়ের ৮০% হোটেল, খাবার, ভ্রমণ ইত্যাদিতে ব্যয় হয় যা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি যুক্ত হয়। এফবিসিসিআইয়ের মতে, পর্যটনের সাথে ১০৯টি খাত সরাসরি ও ১১০০টি খাত পরোক্ষভাবে জড়িত। প্রতিজন পর্যটক গড়ে ৪৫ জনের কর্মসংস্থান করে। বিশ্বের বর্ধমান পর্যটন বাজারের একটি বড় অংশ এশিয়ায়, এবং বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিশাল সুযোগ।
পর্যটন শুধু অর্থনীতির একটি খাত নয়, এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ। এসডিজির অন্তত ছয়টি লক্ষ্য সরাসরি এবং বাকিগুলো পরোক্ষভাবে পর্যটনের সাথে সম্পর্কিত। টেকসই পর্যটন খাত গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি খাত ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে। পর্যটন শুধু ব্যবসা নয়, এটি একটি দেশের সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।