আহসান মঞ্জিল: ঢাকার নবাব পরিবারের ঐতিহ্যের প্রতীক
পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলি এলাকায়, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এটি ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ এবং জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে নওয়াব আবদুল গনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এই প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন, যা ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হয়। তবে, এই স্থানে এর আগেও রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন ছিল, যা জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে, ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি হওয়ার পর, নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি কিনে নেন।
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৮৮ ও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে প্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। ১৯৫২ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইনের আওতায় ঢাকা নওয়াব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করলেও, আহসান মঞ্জিল নওয়াব পরিবারের কাছেই থেকে যায়। পরবর্তীতে, অর্থাভাবের কারণে এর রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে পড়ে।
১৯৭৪ সালে, নিলামে বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেন। ১৯৮৬ সাল থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বর্তমানে এটি পরিচালনা করছে।
আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্য অত্যন্ত চমৎকার। তিন-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বার, উঁচু গম্বুজ, মার্বেল পাথরে শোভিত মেঝে, এবং অভ্যন্তরে বৈঠকখানা, পাঠাগার, নাচঘর, দরবারগৃহ, ভোজনকক্ষ প্রভৃতি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য এটিকে অসাধারণ করে তুলেছে। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে ঢাকার নওয়াব পরিবারের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটানো বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
আহসান মঞ্জিল শুধুমাত্র একটি প্রাসাদ নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত অংশ।