ভূমিধস: বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা
ভূমিধস, পাহাড়ি অঞ্চলের একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় বারবার সংঘটিত হয়। পাহাড়ের ঢাল থেকে মাটি, পাথর ও কাদা ভেঙে নীচে নেমে আসাকে ভূমিধস বলে। এটি প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও মানুষের নানা কার্যকলাপের ফলেও ঘটতে পারে।
- *ভূমিধসের প্রধান কারণ:**
- **প্রাকৃতিক কারণ:** ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প, পাহাড়ি নদীর ক্ষয়, ঢালের অস্থিরতা।
- **মানবসৃষ্ট কারণ:** পাহাড় কাটা, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ, জুমচাষ, বন উজাড়।
- *বাংলাদেশে ভূমিধসের প্রভাব:**
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা, বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করে, জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, এবং প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়। ১৯৯৭ সালে জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায় ১৬০ টি ভূমিধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৮-২০০০ সালে বান্দরবান সদর উপজেলা ও রাঙ্গামাটি শহরে ভূমিধস নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। চট্টগ্রাম জেলার মার্কেনটাইল মেরিন একাডেমীতে ঢাল-অনবস্থা ও নির্মাণ স্থাপনার ক্ষতির ওপর গবেষণা ১৯৫০ এর শেষ দিকে শুরু হয়।
- *প্রতিরোধ ব্যবস্থা:**
ভূমিধস প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। এর মধ্যে রয়েছে:
- **পাহাড়ের ঢাল স্থিরীকরণ:** গাছ লাগানো, ভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- **নির্মাণ কাজের নকশা:** ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ কাজের জন্য বিশেষ নকশা প্রয়োজন।
- **পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা:** ভারী বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুন্দর ব্যবস্থা করা।
- **জনসচেতনতা বৃদ্ধি:** ভূমিধসের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা।
বান্দরবানে জীবপ্রকৌশল ও পয়ঃনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে ভূমিধস প্রতিরোধে সফল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগে কম খরচে বেশি সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
ভূমিধস একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় সরকার, বিভিন্ন সংস্থা এবং জনসাধারণের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন।