ভূঞাপুর: টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত ভূঞাপুর উপজেলা, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। টাঙ্গাইল শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তরে এবং রাজধানী ঢাকা থেকে ১০৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ২২৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, ভূঞাপুর শহরের জনসংখ্যা ২৮,৭০৮ জন এবং ঘরসংখ্যা ৬৮৫৪ টি। উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১৮৯৯১৩ জন।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা:** ভূঞাপুর উপজেলার উত্তরে গোপালপুর ও সরিষাবাড়ী, দক্ষিণে কালিহাতি, পূর্বে কালিহাতি, ঘাটাইল ও গোপালপুর এবং পশ্চিমে যমুনা নদী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা অবস্থিত। যমুনা নদী এবং ভূঞাপুর বিল উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
- *ঐতিহাসিক ঘটনা:** ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভূঞাপুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ২৮ মার্চ ভূঞাপুর কলেজের শহীদ মিনারে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১১ আগস্ট সিরাজকান্দিতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর জাহাজ আক্রমণ করে এবং ১৭ নভেম্বর ছাব্বিশা গ্রামে পাকসেনারা ৩২ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং ৩৫০টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পালসা স্কুল মাঠে একটি গণকবর এবং ইব্রাহিম খাঁ কলেজ প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত আছে।
- *অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:** কৃষি ভূঞাপুরের প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। ধান, পাট, সরিষা, গম, আলু, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও গুরুত্বপূর্ণ। টেক্সটাইল মিল, রাইস মিল, স্টিল মিল, কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, কৃষি-যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, নকশি কাজ কুটিরশিল্পের মধ্যে অন্যতম।
- *শিক্ষা ও সংস্কৃতি:** ভূঞাপুরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ইব্রাহিম খাঁ কলেজ, শমসের ফকির কলেজ উল্লেখযোগ্য। উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৩.৮%। ক্লাব, সিনেমা হল, লাইব্রেরি, নাট্যদল, সাহিত্য সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন উপজেলার সাংস্কৃতিক দিকের দর্শক।
- *যোগাযোগ:** ভূঞাপুরে পাকা, আধা-পাকা এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে। রেলপথ এবং নৌপথের মাধ্যমেও যোগাযোগ সম্ভব। বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ভূঞাপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামো এটিকে টাঙ্গাইল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে স্থাপন করেছে।