ঐতিহাসিক

ঐতিহাসিক চিত্র: বাংলা ভাষার প্রথম ঐতিহাসিক সাময়িকী

১৮৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের উদ্যোগে ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ নামে একটি সাময়িকী প্রকাশিত হয়, যা বাংলা ভাষায় ইতিহাস বিষয়ক প্রথম সাময়িকী হিসেবে পরিচিত। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় উৎস থেকে দেশের ইতিহাস সংগ্রহ ও রচনার লক্ষ্য নিয়ে এই সাময়িকীর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ভূমিকা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কবি তাঁর লেখায় এই উদ্যোগকে আশীর্বাদ জানিয়ে দেশের মানসিক স্থবিরতা দূরীকরণে এর ভূমিকার আশা প্রকাশ করেন।

রাজশাহী থেকে প্রথমে ত্রৈমাসিকভাবে প্রকাশিত ‘ঐতিহাসিক চিত্র’-এর প্রচ্ছদ অংকন করেন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। চারটি সংখ্যা প্রকাশের পর অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় আর এটি চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে ১৯০৪-০৫ সালে (বাংলা ১৩১১-১৩১২) নিখিলনাথ রায় এক বছরের জন্য মাসিক পত্রিকা হিসেবে এর সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। কলকাতার মেটক্যাফ প্রেস এ সময় প্রকাশনায় সহযোগিতা করে। ১৯০৭ সালে (বাংলা ১৩১৪) নিখিলনাথ রায় পত্রিকাটির তৃতীয় পর্যায় শুরু করেন এবং ১৯১২ সালের (বাংলা ১৩১৮) চৈত্র মাস পর্যন্ত এটি প্রকাশ করেন। এরপর এই গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকীর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

সংক্ষিপ্ত জীবনকাল সত্ত্বেও ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ বাংলার ইতিহাস গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। স্থানীয় ইতিহাসের গবেষণামূলক লেখাগুলোকে সুসঙ্গতভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে এটিই প্রথম সফল প্রচেষ্টা ছিল। ভারতীয় ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, এবং স্থানীয় ইতিহাসের উপকরণ অতি যত্নসহকারে সংগ্রহ করে সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন করা হতো। এই পত্রিকা মাতৃভাষায় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার একটি সুষ্ঠু রীতি প্রবর্তন করে।

নিখিলনাথ রায় ছাড়াও অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, কেদারনাথ জুমদার, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, সখারাম গণেশ দেউসকার, সতীশচন্দ্র মিত্র, আনন্দনাথ রায়, অশ্বিনীকুমার সেন প্রমুখ লেখক ‘ঐতিহাসিক চিত্র’-এ তাদের লেখা প্রকাশ করেন। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এই পত্রিকার সম্পূর্ণ সংগ্রহ রক্ষিত আছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৮৯৯ সালে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ সাময়িকী প্রকাশ করেন।
  • এটি বাংলা ভাষায় প্রথম ঐতিহাসিক সাময়িকী।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম সংখ্যায় ভূমিকা লিখেছিলেন।
  • নিখিলনাথ রায়ও পত্রিকাটির সম্পাদনায় অবদান রাখেন।
  • কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এর সম্পূর্ণ সংগ্রহ রক্ষিত আছে।