যমুনা: বাংলাদেশের জীবনরেখা
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী হল যমুনা। প্রকৃতপক্ষে, ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্ন প্রবাহই যমুনা নামে পরিচিত। তিব্বতের হিমালয় থেকে উৎপত্তি লাভ করে, চীন ও ভারত হয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে ভূমিকম্প ও বন্যার ফলে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান যমুনার সৃষ্টি হয়। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদে ব্রহ্মপুত্র তার পুরানো গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণাভিমুখী যমুনা নদী হিসেবে প্রবাহিত হয় এবং আরিচায় গঙ্গা নদীর সাথে মিলিত হয়।
যমুনা নদীর দৈর্ঘ্য বাংলাদেশে ২৭৬ কিমি, যার মধ্যে ২০৫ কিমি যমুনা নামে পরিচিত। এর প্রশস্ততা ৩ কিমি থেকে ২০ কিমি পর্যন্ত, বর্ষায় ৫ কিমি কম হয় না। নদীটি চরোৎপাদী, বিভিন্ন আকৃতির এবং বিনুনি প্যাটার্নের প্রবাহখাত নিয়ে গঠিত। অনেক চর রয়েছে যা বর্ষায় ডুবে যায়। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার অববাহিকার আয়তন প্রায় ৫,৮৩,০০০ বর্গ কিমি। বাহাদুরাবাদে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। বর্ষায় প্রবাহ প্রায় ৪০,০০০ কিউমেক, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নদীসমূহের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৮৮ সালের আগস্টে রেকর্ড ৯৮,৬০০ কিউমেক প্রবাহ পরিমাপ করা হয়।
যমুনা প্রচুর পলি বহন করে। বর্ষায় প্রায় ১২ লক্ষ টন পলি বাহাদুরাবাদে পরিমাপ করা হয়। এর প্রধান উপনদী হল দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা এবং করতোয়া-আত্রাই। যমুনার গতি গঙ্গার তুলনায় অধিকতর গতিশীল। আগস্ট মাসে ব্যাপক বন্যা সাধারণ।
যমুনা নদীর উপর অবস্থিত ৪.৮ কিমি দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করা এই সেতু দ্রুত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ এবং টেলিযোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীশাসন কর্মকান্ড যমুনাকে নির্ধারিত খাতে প্রবাহমান রাখে।
১৯৯২ সালের ল্যান্ডস্যাট ইমেজে যমুনায় ৫৬ টি বৃহৎ দ্বীপ বা চর দেখা যায়। নদীর তীর ভাঙনে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে। যমুনা নদী বাংলাদেশের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।