বিশ্ববাজারে সোনার দামের অস্থিরতা
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববাজারে সোনার দামে ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। জুন মাস থেকেই সোনার দাম ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৭ জুন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২,২৯৩ ডলার, যা ১৬ জুলাই বেড়ে দাঁড়ায় ২,৪৬৮ ডলারে। ২০ সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ২,৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২৬ সেপ্টেম্বর এই দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ২,৬৮২ ডলারে পৌঁছায়। তবে, এই রেকর্ড দামের পর থেকে দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। ১ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার দাম নেমে আসে ২,৬৩১ ডলারে। ১০ অক্টোবর দাম আরও কমে ২,৬০৬ ডলারে নেমে আসে। তবে, ১০ অক্টোবরের শেষ দিকে আবার দাম বাড়তে শুরু করে এবং ১১ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়ায় ২,৬৫৭ ডলারে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমার সাথে সাথে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশীয় বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়। ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১,২৫৯ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যান্য ক্যারেটের সোনার দামও অনুরূপভাবে কমানো হয়। এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩,৪৪ টাকা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের অভূতপূর্ব রেকর্ড
২০২৪ সালের ১ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আরেকটি নতুন রেকর্ড গড়েছে। ওইদিন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠেছে ২,২৬৫ ডলারে। বিশ্ব ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) আগামী মে অথবা জুনে সুদের হার কমাতে পারে- এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীদের কাছে স্বর্ণের আবেদন বেড়েছে, ফলে বাজার আরও চাঙা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি, মূল্যস্ফীতি, এবং মার্কিন ডলারের মূল্য হ্রাসও এতে ভূমিকা পালন করেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বাজার বিশ্লেষক জোসেফ কাভাটনির মতে, ফেডের সুদহার হ্রাসের জোরালো সম্ভাবনাই স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ।
বিশ্ববাজারে চামড়াশিল্পের পরিস্থিতি
বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের রপ্তানি বৃদ্ধি না পাওয়ার ফলে কাঁচা চামড়ার দামে ধস নেমেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ এর সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের দূষণের কারণে এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ) সনদ না পাওয়া এবং রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পরও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। চামড়াশিল্প নগর পরিবেশবান্ধব না হওয়ার কারণে বেশি দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছে না। এর ফলে চীনসহ অন্যান্য দেশের কাছে কম দামে রপ্তানি করতে বাধ্য হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রায় ২১ হাজার ৭৪৯ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্যের বাজার ২০২৪ সালে বেড়ে ২৮ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় একই রয়েছে।
বিশ্ববাজারে জুয়েলারি পণ্যের সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা
জুয়েলারি পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশে দক্ষ স্বর্ণশিল্পী থাকা সত্ত্বেও, সরকারি নীতি ও উচ্চ শুল্ক-করের কারণে রপ্তানি কম। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য বেশি। কারিগরদের দক্ষতার জন্য কম সোনায় জুয়েলারি তৈরির ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, রপ্তানিবান্ধব নীতির অভাবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ২০২৩ সালে বিশ্বে জুয়েলারি বাজারের মোট আকার ছিল ৩৫৩.২৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের শেষে ৩৬৬.৭৯ বিলিয়ন ডলার হবে। তবে বাংলাদেশ মাত্র কয়েক কোটি টাকার রপ্তানি করছে। শুল্ক-করের বোঝা, আমদানির জটিলতা, অবৈধ স্বর্ণ আমদানি, এবং গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জের অভাব রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করছে। দেশে স্বর্ণের কারিগরদের সংখ্যাও কমছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, শুল্ক-কর হ্রাস, এবং গোল্ড রিফাইনারি স্থাপন এই খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে বেসরকারিভাবে দেশে প্রথম স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের কাজ চলছে যা ভবিষ্যতে এই খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির শুল্ক-কর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।