দুই আনোয়ার হোসেন: একজন বিজ্ঞানী, অন্যজন শহীদ
বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘আনোয়ার হোসেন’ নামটি দুটি ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। একজন বিশিষ্ট পারমাণবিক পদার্থবিদ ও বিজ্ঞান লেখক, অন্যজন মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর শহীদ। প্রথম আনোয়ার হোসেন (১৯৩১-২০০৭) বাংলাদেশের পারমাণবিক শক্তি খাতের একজন অগ্রদূত। তাঁর জন্ম টাঙ্গাইলের নাল্লাপাড়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। CERN এবং সুইডেনের স্টুডসভিকে গবেষণা করে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান হন এবং ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থার (SPARRSO) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। UNDP/FAO, LGED, বিশ্বব্যাংক-এর সাথেও তিনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের পাশাপাশি তিনি এনার্জি, রিমোট সেন্সিং, ইকোলজি ও বিজ্ঞান নীতি বিষয়ে ১০০ টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এবং তিনটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই রচনা করেন। ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল ফিলোসফি (জাপান) তাকে কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক প্রদান করে। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকায় মারা যান।
অন্য আনোয়ার হোসেন (১৯৪৮-১৯৭১) ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার সোনাপুর গ্রামে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর তিনি ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যশোর সেনানিবাসে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। তার সাহসিকতা এবং বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। ঢাকা সেনানিবাসের ‘শহীদ বীরউত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল ও কলেজ’ তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।